আশিস গুপ্ত,নয়াদিল্লি : ‘আমার সন্তানদেরও ঘিরে ধরে উত্তেজিত জনতা জিজ্ঞাসা করেছে, বলো তোমরা হিন্দু না মুসলমান? আমি জানি না ওরা কী উত্তর দেবে। আমরা তো ওদের কোনও ধর্মীয় শিক্ষা দিইনি।’ এ কথা বলেছেন ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ।
তিনি জানালেন, ভারতে বর্তমান অহিষ্ণু পরিবেশে তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভয় পাচ্ছেন তিনি! সমাজকর্মীদের সংগঠন কারবাঁ-ই-মহব্বতকে দেওয়া এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে নাম না করে এইভাবেই তীব্র ভাষায় তিনি নিন্দা করলেন বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী অন্য সংগঠনগুলোকে।
গো-হত্যার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ভারতের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া খুনের ঘটনা নিয়েও চাঁছাছোলা ভাষায় নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন নাসিরুদ্দিন। বলেছেন, ‘একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর থেকেও এই দেশে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ গোহত্যা!’
কিছুদিন আগেই উত্তর প্রদেশের বুলন্দসহরে, গোহত্যার অভিযোগ উত্তেজিত জনতার তা-বে খুন হয়েছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ ও এক যুবক। তাঁর পরেরদিন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন যোগী আদিত্যানাথ। উত্তর প্রদেশ প্রশাসন সূত্রে তখন জানা গিয়েছিল, গোহত্যার ষড়যন্ত্রের কড়া তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরপর গোহত্যার অভিযোগ তিনজনে গ্রেফতারও করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমারের খুনের অভিযুক্তরা এখনও ফেরার। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে সেই ঘটনার দিকেই ঈঙ্গিত করেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ ।
তাঁর ভাষায়, দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই বিষ। কিন্তু এই দৈত্যকে ফের বোতলে পুরে ফেলা খুবই কঠিন কাজ। যারা আইন হাতে তুলে নিচ্ছে, তাদেরই রক্ষাকবচ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, এই সমস্ত ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ তিনি। দেশের সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরই এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হওয়া উচিত বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘ভালো বা খারাপ মানুষ হওয়ার সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই ইচ্ছেকৃত ভাবেই আমাদের সন্তানদের কোনও ধর্মীয় শিক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা।’
নাসিরুদ্দিনে এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। শিবসেনার এমপি অরবিন্দ সাওয়ান্ত নাসিরুদ্দিনের এই মন্তব্যে তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ব্লান্ডার করেছেন নাসিরুদ্দিন। যদি ওর সন্তানদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করে কোনও জনতা, তাহলে ওদের পালটা উত্তর দেওয়া উচিত আমরা হিন্দুস্তানী।
রাজ্যসভার সাংসদ, আরএসএসের প্রচারক রাকেশ সিনহাও নিন্দা করেছেন নাসিরুদ্দিনের। স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই টুইট করে তিনি বলছেন, যদি হিন্দুস্তানকে নিরাপদ না মনে হয়, তাহলে নাসিরুদ্দিনের উচিত রোহিঙ্গাদের এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা। নাসিরুদ্দিনের এই মন্তব্যকে অসামাজিক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র বলেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি।