ডিজিটাল বাংলাদেশ ও দুই কেজি পাবদা মাছ!
অসীম সাহা : আমি হাতিরপুলে বাজার করি, তা আজ ত্রিশ বছরের ওপরে। মাছের বাজার থেকে শুরু করে বাজারের প্রায় সকলেই আমাকে চেনে। তাদের সঙ্গে আমার খুব মধুর ও মজার সম্পর্ক। হাসি-ঠাট্টারও সম্পর্ক অনেকের সঙ্গে। এই বাজারে কবি নির্মলেন্দু গুণসহ আরো অনেক কবি-লেখক বাজার করেন।
আমার বেশি খাতির মাছের বাজারের ফারুক এবং সোহেলের সঙ্গে। ওরা দুজনই আমার প্রিয় পাবদা, আইড় এবং কাজলি মাছ বিক্রি করে। ফলে অনেক সময় আমি ফোন করে দিলেও বাসায় মাছ পৌঁছে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কল্যাণে বাংলাদেশ যখন ডিজটালাইজেশনের চরম শিখরে পৌঁছতে শুরু করেছে, তখন ওরা দুজনই আমার মুখগ্রন্থ (ফেইসবুক) বন্ধু। মাঝেমধ্যে ‘হাই-হ্যালো’ হয়। পরস্পর কুশলবিনিময় করি। আমি অনেক রাত জেগে লেখাপড়া করি। মুখগ্রন্থেও বসি। হঠাৎ একদিন রাত প্রায় ১২টার দিকে ইনবক্সে একটি মেসেজ পেলাম, “দাদা, কেমন আছেন?” প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি, মেসেজটা কার! অনুমানে উত্তর দিলাম, “ভালো। কে তুমি?”
উত্তরে সে জানালো, “দাদা আমারে চিনলেন না? আমি ফারুকের মাছের দোকানের পাশের মাছঅলা সোহেল।”
সঙ্গে সঙ্গে আমি চিনতে পারলাম এবং বললাম, “ও সোহেল?” কেমন আছিস?”
সে উত্তরে জানালো, “ভালো। মাছ লাগবোনি?”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী মাছ?”
সোহেল বললো, “পাবদা। দিমুনি দুই কেজি?”
আমি বললাম, “হ পাঠা।”
কিছুক্ষণ পরই দুকেজি পাবদা মাছ আমার বাসায় পৌঁছে গেলো।
এমন একটি ঘটনা যেভাবে ঘটতে পারলো, সেটা কার অবদানে? জ্ঞানপাপীরা সব জানে, সব বোঝে। তারপরও স্বীকার করতে তাদের কুণ্ঠা। ডিজিটাল-সুবিধার সবকিছু ভোগ করেও শেখ হাসিনার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার না করতে পারলে তাদের পেটের ভাত হজম হয় না।
শেখ হাসিনার ১০ বছরের শাসনামলে কোনো ভুল-ত্রুটি নেই, এটা শেখ হাসিনাও বলবেন না। তাই তিনি তাঁদের ইশতেহার ঘোষণার সময় জনগণের কাছে তাঁদের নিজেদের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইতে দ্বিধাবোধ করেননি। এমন সৎসাহস কার আছে? অন্য দলের নেতা, পাতিনেতা ও কুশীলরা যখন শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন, তখন খুব কৌতুক বোধ করি। “আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও” এই আপ্তবাক্য তারা কোনোদিন পাঠ করা তো দূরের কথা, শুনেছেন বলেও মনে হয় না। যদি পড়তেন, তা হলে অন্ধের মতো শেখ হাসিনার সমালোচনা করতেন না কিংবা তাঁকে আক্রমণের ভোজালি দিয়ে ফালফালা করতেন না।
শেখ হাসিনার প্রদত্ত ডিজিটাল-সুবিধা নিয়ে যারা তাঁর বাপ-বাপান্ত করেন, তারা বেঈমান, বাংলাদেশেশের অস্তিত্বে অবিশ্বাসী পাকিস্তানি মানসিকতার কুলাঙ্গার। তারা সমালোচনা নয়, কুআলোচনা করেন। যারা এটা করেন, তাদের শুধু বাজারে গিয়ে ফারুক-সোহেলদের মতো মাছঅলা ও সবজিঅলাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখতে বলি, ডিজিটাল-পদ্ধতির মাধ্যমে দুকেজি মাছ বিক্রির মাধ্যমে তারা কতোটা খুশি? শুধু মাছ বিক্রি করে নয়, স্ক্রিনটাচ মোবাইল ফোনের সৌজন্যে যোগাযোগের এই সহজ পথ পেয়ে তারা কতোটা আনন্দে আপ্লুত। তা হলেই তারা টের পাবেন, তারা কতোটা কল্পনার স্বর্গে বাস করেন। ১০ বছর আগে এই সুযোগ কোথায় ছিলো? এটা পুরোপুরিই শেখ হাসিনা-সরকারের কৃতিত্ব। শেখ হাসিনাকে এই কৃতিত্বটুকু দিতেও যাতের কার্পণ্য, তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, স্বৈরশাসকের উচ্ছিষ্টভোগী দালাল। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা তা টের পাবেন। ফারুক-সোহেলদের মতো লোকেরা এইসব সুবিধাভোগী ধান্ধাবাজদের ভোটবাক্সের বাইরে ফেলে দিয়ে বুঝিয়ে দেবে, তারা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথে শেখ হাসিনার সঙ্গেই আছে।
লেখক : কবি ও সংযুক্ত সম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি