বছরে গড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হচ্ছে
রমজান আলী : দেশের অর্থনীতি ভালো হলেও ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক। খেলাপি ঋণ বাড়াতে চরমভাবে ব্যাংকিং খাত ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াতে আয় কমে যাচ্ছে ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যাংকিং খাত এমনটাই জানান দেশের অর্থনীতিবিদরা।
ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়ায় গত সাত বছরে ব্যাংক খাতে গড়ে ৭৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণখেলাপি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর ব্যাংকগুলোতে গড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা নতুন ঋণখেলাপি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোয় সুশাসনের ঘাটতির কারণে অসৎ ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা জনগণের আমানতের অর্থ তছরুপ করছেন। ব্যাংক খাতে যতদিন সুশাসন আসবে না, ততদিন খেলাপি বাড়তেই থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সাল শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ২০১২ সাল শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওই বছরে ব্যাংক থেকে ২০ হাজার ৮১ কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যায়। ২০১২ সালের প্রত্যেক মাসে গড়ে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করে ব্যাংক খাত থেকে বের করে নেওয়া হয়। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ে ১৩ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই বছরে ব্যাংকের টাকা লোপাট হয় আরও ১৩ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ২৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণ গিয়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। ওই এক বছরে ১৪ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। ২০১৭ সালের প্রত্যেক মাসে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে এক হাজার ২১৪ কোটি টাকারও বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ফলে এক বছরে নতুন করে ঋণ খেলাপি হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বিগত প্রত্যেক মাসে ব্যাংক থেকে হাওয়া হয়ে গেছে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ। গত ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে (জুন-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। সর্বশেষ তিন মাসের প্রত্যেক মাসে গড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করে লোপাট হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বাড়লেও ডিসেম্বর প্রান্তিকে এসে কমে যাবে। ব্যাংকগুলোকে খেলাপি আদায়ে নির্দেশ দেওয়া আছে। কাজেই ব্যাংকগুলো আদায় বাড়ালেই খেলাপি ঋণ কমে আসবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান