বিভুরঞ্জন সরকার : নিচের ছবিগুলো পরিত্যক্ত পলিব্যাগ বা আবর্জনার স্তূপ নয়। এগুলো ঘুমন্ত মানুষের ছবি। ২৩ ডিসেম্বর সকাল সোয়া আটটায় ছবিগুলো তুলেছি কাকারাইলে মসজিদের উল্টো দিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউটের দেয়ালঘেঁষা ফুটপাত থেকে। এতো মানুষ এখনও ফুটপাতে ঘুমায়? এই প্রচ- শীতে এমন উদোম জায়গায় সামান্য শীতবস্ত্রে কী করে এদের রাত কাটে? এরা নিশ্চয়ই স্বভাবে নয়, অভাবেই এই পথশয্যা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। এরা কী জনগণনায় অন্তর্ভুক্ত? ভোটার তালিকায় কী এদের নাম আছে। অতিদরিদ্র বা হতদরিদ্র মানুষের যে সংখ্যা কাগজে-কিতাবে আছে তাতে কী এদের ধরা হয়েছে?
গৃহহীন বা ছিন্নমূল যাই বলি না কেন ঠিকানাহীন এই পথের মানুষদের ঠিকানা দিতে না পারলে এরা কি আমাদের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে বিদ্রুপ করবে না? এরা ফুটপাথে রাত কাটায়, দিন কাটায়। এরা নিশ্চয়ই সুস্থ-স্বাভাবিক কর্মক্ষম মানুষ। এরা খায় কি? এদের আয়ের উৎস কি? মসজিদে-মন্দিরেও কেন এদের ঠাঁই হয় না? এরা অজু করে না, নামাজ পড়ে না বলে কিংবা পূজাপার্বণে অংশ নেয় না বলে ? এরা কী আল্লাহ বা ভগবানের বান্দা নয়? মোল্লা-পুরতরা দখল নিয়েছে ভজনালয়ের, মানুষ ঠাঁই নেয় ফুটপাতে!
একবার ভাবলাম, এদের ডেকে তুলি। বলি, এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাও কেন? আবার ভাবলাম, ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ যতোটুকু আরাম পায় পাক না! আচ্ছা, ওদের কাছে যদি আমাদের মাথাপিছু গড় আয় কতো ডলার সেটা জানতে চাইতাম, কী জবাব দিতো? ‘ওইডা আমরা দেখছিও না, খাইছিও না। ওইডার খবর আমরা জানি না’। তাই কি? হায় মানুষ, হায় জীবন!
লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়