ফাতেমা আহমেদ : জনসংখ্যাবৃদ্ধি ও পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যার ফলে বিশ্বে খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। চাহিদা মেটাতে টেকসই কৃষিকাজের জন্য যথেষ্ট জায়গাও নেই। বিজ্ঞানীরা পানির নিচে নিমজ্জিত বাগানে সেই কাজই করছেন। ঢাকাটাইমস
সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১০ মিটার গভীরে এই কাঠামো আসলে বায়োস্ফিয়ার। বিশ্বের প্রথম নিমজ্জিত গ্রিনহাউস। ভবিষ্যৎধর্মী এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পদের ঘাটতির সমস্যার মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। ডুবুরি হিসেবে জানি ফন্টানেসি সেখানে প্রায় ৪০টি গাছের দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে অদ্ভুত ও অসাধারণ মনে হয়। বর্ণনা দেয়া কঠিন। এখন প্রতিদিন সেখানে কাজ করে আমি প্রকল্পের বিকাশ দেখতে পাই। ফলাফল নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। শুধু সমুদ্রের নীচে নয়, গোটা বিশ্বে কত হ্রদ এই প্রণালি ব্যবহার করে লাভবান হতে পারে, তা একবার ভেবে দেখুন।’
৬ বছর আগে ডুবুরিরা সৈকতের নিচে প্রথম নিমজ্জিত গ্রিনহাউস তৈরি করেন। সূর্যের আলো সালোকসংশে�ষণ প্রক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট। কোনোরকম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পরিশোধন করেই মূলত গাছে পানি দেয়া হয়। ‘নেমোস গার্ডেন’ এ নানা রকম ফলমূল ও শাকসবজি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। জানি ফন্টানেসি বলেন, ‘এই পানির ট্যাংকে অনেক পানি ও সার রয়েছে। ভেতরে এক পানির পাম্পও রয়েছে। গোটা প্রণালী আসলে খুবই সহজ। পাম্প নিচে থেকে উপরে একটি টিউবে পানি সরবরাহ করছে। টিউবের উপরে নানা রকম গাছপালা রয়েছে, যেগুলি মাটি ছাড়াই বেড়ে উঠছে। সব শিকড়ের সঙ্গে পানির সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে পানি নীচের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।’
নোলি নামের প্রায় ৩ হাজার জনসংখ্যার জনপদের পাশে রয়েছে এক পর্যটনকেন্দ্র। শুধুমাত্র ডুবুরি ও স্থানীয় মানুষই জানেন যে, সৈকত থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে, বিশেষ এক নিমজ্জিত গবেষণাগার রয়েছে। সবকিছু অক্ষত আছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে জানি ফন্টানেসি সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ বার পরীক্ষা করেন। মনিটরে বায়োস্ফিয়ারের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
জানি ফন্টানেসি বলেন, ‘এখানে মনিটারিং করা যায়। সেখানে সামগ্রিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন বায়োস্ফিয়ারের মানচিত্র রয়েছে। সব প্রযুক্তি সৌরশক্তিতে চলে। উপরে তার প্যানেল ও বাতাসচালিত চাকা রয়েছে। আমরা সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত হবার চেষ্টা করি।’
একটি থামের মধ্যে সেই সব তার লুকানো রয়েছে, যার মাধ্যমে বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। এই বাগানের উদ্যোক্তারা আসলে ডুবুরিদের সাজসরঞ্জাম উৎপাদন করে। নিমজ্জিত গবেষণাগারেও সেই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে ফসল তোলার কথা রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই প্রকল্প সম্পর্কে খোঁজখবর করছেন। বেলজিয়াম, মরিশাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর মধ্যেই একই ধরনের নিমজ্জিত গবেষণাগার তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রের বাগান এখন আর কল্পনাতে নেই। এই প্রকল্প টেকসই কৃষিকাজের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।