২০১৯ বিশ্বকাপ ঘিরে বাংলাদেশ দলের ভাবনা
আক্তারুজ্জামান : ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাকি আর মাত্র পাঁচমাস। আইসিসির দ্বাদশ এই আসর বসবে ইংল্যান্ডের মাটিতে। আসরকে সামনে রেখে দল গোছানো শুরু করেছে প্রতিটা দলই। চলতি সিরিজ বা আগামী সিরিজ সবগুলোতেই প্রতিটা দলের নজর বিশ্বকাপের দিকে। ভারসাম্যপূর্ণ দল তৈরি, সেরা কম্বিনেশন খোঁজা, ইনফর্ম পারফরমারদের পরিচর্যা, দলের মাঝে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করা, সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুতির দিকে নজর সবাই। বাংলাদেশ দলও এর বাইরে নেই।
ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষ। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের আগে এটাই শেষ সিরিজ। তারপর ফেব্রুয়ারি-মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডেও ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে অংশ নিবে টাইগাররা। এই দুই সিরিজেই মূলত দল গোছানোর কাজ সেরে নেবে টাইগাররা।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাবনা নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই শুরু হবে, এমনকি প্রস্তুতিও শুরু হবে নিউজিল্যান্ড থেকে। কারণ ইংল্যান্ডের সঙ্গে কন্ডিশন, উইকেটে কিছুটা হলেও মিল পাওয়া যাবে। কয়েকদিন আগে এমন কথায় বলেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির বিষয়ে বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিউজিল্যান্ড থেকেই ভালো নেওয়া যাবে। ইংল্যান্ডের উইকেট, কন্ডিশন, আউটফিল্ড সবকিছু মোটামুটি একই রকম থাকবে। এখান থেকে যেটা ইতিবাচক হতে পারে, জিতে গিয়ে নিউজিল্যান্ডে আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাওয়া।’
এতো গেলো কন্ডিশনগত বিষয়, এবার আসা যাক দল গোছানোর দিকে। উইন্ডিজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একাদশে ছিলেন চার ওপেনার। যেখানে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করেছেন তামিম ইকবাল, লিটন দাস এবং ইমরুল কায়েস, সৌম্য খেলেছেন ছয়ে। এই বাঁহাতিকে দিয়ে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব পূরণের ভাবনা ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের। যদিও ম্যাচে সেটির প্রয়োজন পড়েনি। পেস বিভাগে মাশরাফির পাশাপাশি মোস্তাফিজ, রুবেল ছিলেন। স্পিনে সাকিবের সঙ্গে মিরাজ। এই পাঁচজনের বাইরে কোনো বোলার কাজে লাগাননি মাশরাফি। এটা অনস্বীকার্য যে, তারা পাঁচজনই ওয়ানডেতে এখন বাংলাদেশের মূল বোলার। ছন্দে থাকলে প্রতিপক্ষের জন্য সবসময় ভীতির কারণ তারা। এর বাইরে মাহমুদউল্লাহও দলের প্রয়োজনে হাত ঘোরাতে সক্ষম। সাকিব পাঁচে, সৌম্য ছয়-সাতে খেললে দলের ব্যাটিংটাও পোক্ত থাকে। আবার বোলিংয়ে পাঁচ বোলারের বাইরেও দুজন থাকেন যাদেরকে ব্যবহার করা সম্ভব।
তবে এটা ঠিক নয় যে, সিরিজের দলটাই বিশ্বকাপে যাবে। নিশ্চিতভাবেই দুই-একটি পরিবর্তন হবে চূড়ান্ত স্কোয়াডে। বিশ্বকাপে দলটাও হবে ১৫ সদস্যের। নিয়মিত ক্রিকেটার ছাড়াও বিশ্বকাপের সমীকরণে আছেন সাব্বির, মোসাদ্দেক ও সাইফউদ্দীন। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ আছেন সাব্বির, ফেব্রুয়ারিতে তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে। ওয়ানডের একাদশে ছয়-সাতে তার মতো হার্ডহিটার কাউকে সবসময়ই চায় বাংলাদেশ দল। টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্র বলছে, ফর্ম-ফিটনেস ঠিক থাকলে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেই দলে দেখা যেতে পারে সাব্বিরকে।
গত বিশ্বকাপে খেললেও তাসকিন আহমেদ এবারের আসরের সমীকরণে পিছিয়ে পড়েছেন। চোটজর্জর এই পেসার দলে নেই। সুস্থ হয়ে মাঠে নামার লড়াইয়ে থাকা তাসকিন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দলে ফিরতে পারবেন, এমন বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিলো বাংলাদেশ। ভারতের কাছে হেরে বিদায় নেয় টাইগাররা। ওয়ানডে অধিনায়কের চোখে গত আসরের চেয়ে এবারই দল হিসেবে বেশি ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন-সারথী কারা হবেন, তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিশ্বকাপে ভালো সাফল্য পেতে একটা ভারসাম্যপূর্ণ একাদশ, সঠিক কম্বিনেশনের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা অনেক। আগামী ম্যাচগুলোতেও সেটির সন্ধানেই থাকবে বাংলাদেশ।