ভারতে ২০ কোটি শ্রমিকের ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন
ইমরুল শাহেদ : ভারতের ১০টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের ২০ কোটি শ্রমিক মঙ্গলবার ও বুধবার ভারতজুড়ে ১২ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করেছে। কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন এই ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে। তবে ভারতীয় মজদুর সংঘ এবং বিএমএস এই ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেনি। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন বুধবার বিকেলে ধর্মঘটরত শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মান্ডি হাউজ থেকে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে যায়। অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের মহাসচিব অমরজিত কাউর বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, গোয়া এবং বিহারে ধর্মঘট পুরোপুরি পালিত হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও শত ভাগ ধর্মঘট পালন করা হয়েছে। তবে কয়েকটি রাজ্যে মঙ্গলবার এবং কিছু রাজ্যে বুধবার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হওয়ায় সেখানে যানবাহনের ধর্মঘট কিছুটা শিথিল রাখা হয়েছে। বুধবার দিনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে, ব্যাংক, ডাক যোগাযোগ এবং যানবাহন বিঘিœত হয়েছে। এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া
ট্রেড ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার বেকার সমস্যা সমাধানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এবং ১২ দফা দাবিও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তারা বলেছেন, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিসহ কোন মন্ত্রীই ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে শ্রমিক ইস্যু নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনাই করেননি। তাই তাদের হাতে ধর্মঘট করা ছাড়া হাতে আর কোনো উপায়ই ছিল না। সেন্টার অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন (সিআইটিইউ) জানিয়েছে, শ্রমিক বিরোধী নীতি গ্রহণের বিরুদ্ধে বর্তমান ধর্মঘট হলো ১৮তম। সিআইটিইউ আরো বলেছে, ১২ দফা দাবি আদায় হলে দেশের অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে এবং শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ১২ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ভারতজুড়ে এই ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ১২ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা, মাসিক বেতন ন্যূনতম ১৮ হাজার রুপি, মাসিক ৬ হাজার রুপি সর্বজনীন পেনশন দেওয়াসহ বেসরকারি সংস্থাকে জাতীয়করণ বন্ধ করা। তারা ১৯২৬ সালের ট্রেড ইউনিয়ন এ্যাক্ট সংশোধনেরও বিরোধিতা করেন।
আন্দোলনকারী ইউনিয়নগুলো দাবি করেছে, কৃষক, ছাত্র এবং শিক্ষক সম্প্রদায়ও সংশ্লিষ্টদের স্বস্ব সংগঠনের মাধ্যমে তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ধর্মঘট প্রতিহত করার জন্য কলকাতায় নামানো হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি পুলিশ। শহরের বিভিন্ন বাজার, অফিস চত্বর, বাস ডিপো, ফেরিঘাট, মেট্রো স্টেশন মিলিয়ে ৩০০ স্থানে মোতায়েন করা হয় পুলিশের দল।
বুধবার আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্গাপুর, খড়কপুর, জামুড়িয়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বামেরা। কলকাতার ধর্মঘটের ছবিটাও একই রকম। বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। ধর্মঘট মোকাবিলায় সকাল থেকেই শ্যামবাজার, মৌলালি, গড়িয়া, ধর্মতলা-সহ কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশকে টহল দিতে দেখা যায়। যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে বাম কর্মী-সমর্থকদের মিছিলে ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের সঙ্গে। গড়িয়ায় বাসে ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। বারাসতে পড়ুয়াভর্তি স্কুল বাসে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি চালককেও মারধর করা হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পড়ুয়ারা। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। পাশাপাশি, যাদবপুর, গড়িয়া-সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করেন ধর্মঘট সমর্থকরা। গ্রেফতার করা হয় সুজন চক্রবর্তী, অনাদি সাহু-সহ বেশ কয়েক জন বাম নেতাকে। সম্পাদনা: আসিফুজ্জামান পৃথিল