ঋণ আদায় নিশ্চিত ও খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে : অর্থমন্ত্রী
‘ব্যাংক ঋণ সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংকেরই হোক যথাসময়ে সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। জনগণের টাকা বেহাত হোক-তা আমরা চাই না’ ষ অবলোপনকৃত ঋণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিটি গঠন
সোহেল রহমান : ঋণ আদায় নিশ্চিত করা ও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’ রিভিউ করার পাশাপাশি আইনের বিচ্যুতি ও দুর্বলতাগুলো সংশোধন করা হবে। একই সঙ্গে ঋণগুলো কী কারণে ও কাদের কারণে খেলাপি হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া অবলোপনকৃত ঋণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত এ কমিটি ১৯৭২ সাল থেকে প্রতিটি অবলোপনকৃত ঋণ পরীক্ষা করে দেখবে।
গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাং!বাদিকদের এসব কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের বাইরে থাকায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছাড়া বিভাগের অন্যান্য সকল কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক খাতের কিছু কিছু আইনে বিচ্যুতি আছে, আমরা সেই আইনগুলো আগে সংশোধন করবো। ব্যাংকগুলোর নন-পারফরমেনিং লোন (খেলাপি ঋণ) বিপুল ভাবে কমে আসতো, যদি বিদ্যামন আইনটি বলবৎ রাখতে পারতাম এবং তা যদি বাস্তবায়ন করতে পারতাম। কিন্তু বিদ্যমান আইনে কিছু দুর্বলতার কারণে আমরা আইনগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছি না। আইনের বিভিণœ ধারায় বা সেকশনে যে দুর্বলতা রয়েছে তা আমাদের কাটিয়ে ওঠতে হবে। তাই আমরা আইনটিকে আবার রি-ভিজিট করার চেষ্টা করছি এবং অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি সাপেক্ষে কিছুটা সংশোধনী আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোন ঋণ খেলাপি হবার পর তা দ্রুত চলে যায় হাইকোর্টে। হাইকোর্টে সবাই যেতে পারে, ডেফিনেটলি, আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিকের এই অধিকার আছে। এর মাধ্যমে তারা একটি নিস্পত্তি চায়। কিন্তু আনফরচুনেটলি, এখানে অনেক সময় লেগে যায়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যারা ঋণ গ্রহণ করবে, তা সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই নেয়া হোক না কেন, তা দিনের শেষে পরিশোধ করবে। কারণ এই টাকা জনগণের টাকা, দেশের জনগণের এই টাকা এভাবে বেহাত হোক বা ফিরে না আসুক Ñতা আমরা চাই না। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্যে হচ্ছে, যারা সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, তারা তাদের ঋণের অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদসহ পরিশোধ করবেন। এই বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করবো এবং এই জন্য আমরা আইনের কিছু পরিবর্তন আনবো, যদি প্রধানমন্ত্রী এতে অনুমোদন দেন।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে ব্যাংক খাতে যে সব খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়েছে সেগুলো প্রতিটি ঋণ স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এগুলো মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি স্বতন্ত্রভাবে প্রতিটি অবলোপনকৃত ঋণ পরীক্ষা করে দেখবে। এতে আমরা দেখবো, কী কারণে, কাদের কারণে এই সকল ঋণ খেলাপি রয়েছে এবং কেন আমরা যে পরিমান ঋণ দিয়েছিলাম তা ফেরত পাচ্ছি না। কোনো সরকারি কর্মকর্তা সম্পৃক্ত আছে কি নাÑ সেটাও আমার খুঁজে বের করবো। এর কারণ হলো, যিনি ঋণ গ্রহীতা তিনি চেষ্টা করবেন কীভাবে ঋণ শোধ না করে থাকতে পারবেন্। কিন্তু সেখানে আমাদের সরকারের তরফ থেকে কেউ সাহায্য সহযোগিতা করেছে কীনা, সেখানে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে কীনা, সেখানে কোনো ব্যত্যয় হয়েছে কীনা, সেটা আমরা দেখবো। সেই ঋণগুলো পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো। কিন্তু আমরা কারো প্রতি নির্দয় হবো না, যদি আমরা অর্থটা আদায় করতে পারি।
তিনি বলেন, এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এখানে আউটসোর্সিং করে চলতে হচ্ছে। এ বিভাগের জনবল ও দক্ষতা বাড়াতে ‘ব্লক চেইন’ টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। এই টেকনোলজি উন্নত সব দেশে ব্যবহার করা হতে থাকে।