সাত্তার আজাদ : সিলেটের গ্রামাঞ্চলে এক ধরনের শিম উৎপাদন করা হয়। এই শিমের বীজ সবজি হিসেবে সিলেটের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। লন্ডন, আমেরিকাসহ প্রবাসী অধ্যুষিত বিভিন্ন দেশে শিমবীজ রপ্তানি করা হয়। স্থানীয়ভাবে এই শিমের নাম ঝাড়শিম বা ফরাসবিচি। প্রতিবছরের মত এবারও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় ঝাড়শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে, জেলার বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, হরিপুর, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজারে ফরাসবিচির চাষাবাদ করা হয়। এবারের ১৫০০ হেক্টর জমিতে ফরাসবিচি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ১৫৭০ হেক্টর জমিতে। বাজারেও এই বীজের চাহিদা ব্যাপক। মৌসুমের শুরুতে ফরাসবিচির প্রতিকেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বাজারে আমদানি বাড়ার সাথে দামও কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত প্রতিকেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ফরাসবিচি উৎপাদনের সময় শুরু হয় অক্টোবর মাসে। ফলন আসতে শুরু করে নভেম্বরের শেষ থেকে পুরো জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিজুড়ে ফরাসবিচি উৎপাদন মৌসুম। গাছ এক থেকে দেড় ফুট উঁচু। প্রতি গাছে ৬-৭ ইঞ্চি লম্বা শিম ধরে। এই শিমের ভেতরের বীজই হল ফরাসবিচি। শুধু সিলেটে এই ফরাসবিচির উৎপাদন করা হয়। শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে শিম পেড়ে ফরাসবিচি বের করা হয়। প্রতি শিমে ৬-৭টি বীজ থাকে। ক্যাপসুল আকারের বিভিন্ন রংয়ের ফরাসবিচি দেখতে খুবই সুন্দর। শীতের সময় ঝাড়শিম তুলে উঠোনে বসে কৃষি পরিবারের সদস্যরা মিলে শিম থেকে ফরাসবিচি বের করে বাজারে বিক্রির উপযোগী করা হয়। এই সময় সিলেটের বাজারে ফরাসবিচি পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম একটু বেশি। বেশি দাম পেয়ে কৃষকরাও খুশি।
সিলেটের বিয়ানীবাজারে ব্যাপকহারে ফরাসবিচি চাষাবাদ করা হয়। সে এলাকাতে এই বীজের চাহিদা বেশি। বীজ শুকিয়ে অথবা বিশেষভাবে প্যাকেটজাত করে কাঁচা ফরাসবিচি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। মাস দিয়ে বা লাইল করে এই বীজ খাওয়া হয়। সিলেট ছাড়া দেশের আর কোথাও ফরাসবিচির চাষ করা হয় না। দেশের কোনো কোনো এলাকায় একই প্রজাতির ঝাড়শিমের চাষ হলেও স্বাদে ও নামে তা ভিন্ন। দেশের কোনো কোনো এলাকায় একে ফেলন বা ফেলনা বলা হয়। সিলেটের কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে সিলেটে ফরাসবিচির উৎপাদন আশানুরূপ। বলা যায় বাম্পার ফলন হয়েছে।