তরিকুল ইসলাম, লিহান লিমা : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ফিলিপাইনের রিজাল কর্মার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) সাবেক শাখা ম্যানেজার মায়া সান্তোষ দিগুইতোকে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করাসহ কারাদ- দেয়া হয়েছে। দেশটির মাকাতি রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট এ রায় দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ওই অর্থ চুরি হয়।
সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, ফিলিপাইনের মাকাতি রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট বলেছেন, আরসিবিসির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মায়া দিগুইতোর বিরুদ্ধে ৮টি মানি লন্ডারিং মামলার অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি মামলার জন্য তার ৪ বছর করে জেল এবং ১০৯ (১০ কোটি ৯০ লাখ) মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই মামলা থেকে দেশটির ‘ক্যাসিনো বস’ বলে পরিচিত কিম ওং’কে খালাস দেয়া হয়েছে। কিম ওং চুরি যাওয়া অর্থ থেকে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত দিয়েছেন। বাকি যে চারজন একাউন্টধারীর নামে অর্থ গিয়েছিল তাদের বিষয়ে আদালত কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এই মামলা এখনো সমাপ্ত হয় নি।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে হ্যাকিং করে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের মাকাতিতে জুপিটার স্ট্রিট শাখায় চলে যায়। তখন ওই শাখার ম্যানেজার ছিলেন মায়া দিগুইতো। বাকি যে চারজন একাউন্টধারীর নামে অর্থ গিয়েছিল বলে অভিযোগ তার রয়েছে তাদের বিষয়ে আদালত কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণার পর মারিয়া সান্তোষ দিগুইতো ভীষণভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে জানিয়ে তার আইনজীবী বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন। শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিগুইতোকে জেল দেয়া যাবে না। দিগুইতো ব্যাংকে যে পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন তার সেই দায়িত্ব পালনের কারণে তাকে দায়ী করা যায় না। কারণ, ব্যাংকে তার পদটি ছিলো কাস্টমার কেয়ার বিষয়ক। ফলে ব্যাংকে যে লেনদেন হয় তার অপারেশনাল কাজের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে আরসিবি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘দিগুইতো একজন ‘শঠ’ কর্মী। তাদের ব্যাংক এই অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার ‘শিকার’ হয়েছে।’ অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত থাকায় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরসিবিসিকে ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করে।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রাষ্ট্রীয় মদদে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পরিকল্পনা এঁটেছিলো। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিজেদের সিস্টেমে কোন ক্রুটি থাকার ঘটনা অস্বীকার করেছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্ধার করা গিয়েছে। কোটি কোটি ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের ক্যাসিনোর জুয়ার আসরে। ফিলিপাইনে অর্থ পাচার বিরোধী আইনের আওতায় ছিল না ক্যাসিনো। ২০১৭ সালের জুনে ক্যাসিনো ব্যবসাকে অর্থ পাচার বিরোধী কাউন্সিলের আওতায় আনা হয়।