এত ভুল তবু বিপিএল কমিটি বলছে ‘সব সুন্দর ফুল’
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিপিএলে সম্প্রচারের মান বিশ্বকাপ আর আইপিএলের সেমিফাইনাল-ফাইনালের মতো।’ হাস্যকর ভুলে ভরা বিপিএলের দুর্বল প্রোডাকশন নিয়ে বিস্তর প্রশ্নের মুখে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক যখন এই কথা বলেন তার খানিক পরের ঘটনা এমন-
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ব্যাট করতে নামলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার টি-টোয়েন্টি রেকর্ডে দেখানো হলো টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ আছে ৪১ রান। অথচ ঠিক আগের ম্যাচেই তিনি করেছেন ৫১ রান। সেটা বেমালুম গায়েব!
আপনি যদি এটাকে খুব সাধারণ এক ভুল বলে এড়িয়ে যান তাহলে আপনার জন্য উদাহরণ আছে আরও। ৮ জানুয়ারি রংপুর রাইডাসের বিপক্ষে খেলছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আউট হয়ে ফিরছেন মোহাম্মদ শহীদ। স্ক্রিনে শহীদের ছবির পাশে নাম দেখানো হলো আবু হায়দার রনি! একদম শুরুর দিন চিটাগাং ভাইকিংস পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদের বয়স ১১৯ বছর দেখানো নিয়ে কম হাস্যরস হয়নি। ওটা সরিয়ে রেখে ৬ জানুয়ারি কুমিল্লা-সিলেট ম্যাচে যান। খেলার সপ্তম ওভার, আগে ব্যাট করা সিলেটের স্কোর ৩৭/২। তখন টপ ভিউ থেকে দেখানো হলো ব্যাট করছে ঢাকা ডায়নামাইটস! আবার ফিরে যাওয়া যাক প্রথম দিনে। ঢাকার বিপক্ষে লড়ছিল রাজশাহী। দলের স্কোর যখন ৫৩/৩, তখন ব্যাট করছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ ও জাকির হাসান। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে দেখা গেলো দুই ব্যাটসম্যানেরই নাম জাকির হাসান!
ওই ম্যাচেরই প্রথম ইনিংসে যাওয়া যাক। ঢাকার দুই ওপেনার পাওয়ার প্লের ছয় ওভারেই তুলেছেন ঝড়। ৬ ওভার শেষে স্কোরকার্ডে দেখালো ঢাকা- ৬৮/০ (৬ ওভার)। হজরুতুল্লাহ জাজাই ব্যাট করছেন ২১ বলে ৪৯ করে, সুনীল নারিনের রান ১৪ বলে ৯। আর অতিরিক্ত থেকে এসেছে ৬ রান। সব যোগ করলে দাঁড়ায় ৬৪ রান। তাহলে বাকি চার রানের হিসাব কই? আসলে টিভি প্রোডাকশনে নারিনের রান ভুল দেখানো হয়েছিল। নারিন তখন অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ১৩ রানে। গোলমাল বাধে সেখানেই। গ্রাফিক্সের ভুলে ভরা ওই ম্যাচের পরের ইনিংসে আবার ফেরা যাক। ১৯০ রান তাড়ায় ১২.৪ ওভারের সময়ের দৃশ্য। টিভি স্ক্রিনে দেখালো জিততে রাজশাহীর দরকার ৩৮ বলে ১১৫ রান। আপনি হিসেব করে দেখুন ৭.২ ওভারে হয় আসলে ৪৪ বল। বিপিএলের প্রোডাকশন পুরো ছয় বল গায়েব করল কোথায়? ইনিংসের আরও একটু পেছনে গেলেও এক ওভারের গড়মিল খুজে পাওয়া যায়। ৯ ওভার শেষে রাজশাহীর রান ৫ উইকেটে ৫৬। স্ক্রিনে দেখাচ্ছে জিততে তাদের দরকার ৬০ বলে ১৩৪! খেলা তো ২০ ওভারের তাহলে আরেক ওভার কোথায়? খেলোয়াড়দের নাম ভুল দেখানো। ধারাভাষ্যকারদের হাস্যকর সব ভুল। বল এক দিকে ক্যামেরা তাক করা আরেক দিকে। এমন ভুলের ছড়াছড়ি তো আছেই। আম্পায়ারের মান নিয়েও আছে বরাবরই মতই প্রশ্ন। প্রথম আট ম্যাচে ডিআরএসে ছিল না আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিই। এ যেন নুন ছাড়া তরকারির মতো। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো আল্ট্রা এজ প্রযুক্তি ছাড়াই কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্ত টিভি আম্পায়াররা রিভার্স করেছেন।
নিয়ম হলো মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলাতে হলো স্পষ্ট প্রমাণ হাতে পাওয়া চাই টিভি আম্পায়ারের। আল্ট্রা এজ প্রযুক্তি ছাড়া তা সেটা কীভাবে পেয়েছিলেন কেবল তারাই জানেন।
প্রতিদিন এতসব ভুলের পরও আল্ট্রা এজ প্রযুক্তি যোগ করেই ইসমাইল হায়দার মল্লিক তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললেন, ‘প্রোডাকশনের ভুল নেই। আমাদের ধারাভাষ্যকার কয়েকটা হয়তো ভুল বলেছেন। আর একদিন গ্রাফিক্সে একজন ক্রিকেটারের বয়স ভুল দেখানো হয়েছে। সেটা টাইপিংয়ের ভুল। খুব বড় কিছু নয়। আর ধারাভাষ্যকাররাও মানুষ। তাদের ভুলকে মানুষের ভুল হিসেবে নিতে হবে। প্রোডাকশনের কোনো কিছু না।’
গ্রাফিক্সের ভুলগুলো এরপর আরও নির্দিষ্ট করে প্রশ্ন রাখলে জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রাফিকসে যে ভুলগুলি আছে, আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। চেষ্টা করব ঠিক করার। ধারাভাষ্যকার প্যানেলে আমরা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। সামনে ড্যারিল কালিনান, ড্যানি মরিসন আসবে। যারা বারবার ভুল করবে, তারা থাকবে না প্যানেলে। সূত্র: ডেইলি স্টার