বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে দশ মেগা প্রকল্পের অধিকাংশ
সোহেল রহমান ও আনিস তপন : বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে আছে মহাজোট সরকারের দশ মেগা প্রকল্পের (ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট) অধিকাংশ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। এর বিপরীতে গত নভেম্বর পর্যন্ত সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬২ শতাংশ। অন্যদিকে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। এমতাবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সেতু বিভাগ। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যয় করা সম্ভব হবে না বিধায় সংশোধিত এডিপি-তে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সরকারি হিসেবে, মূল সেতুর ৭০ শতাংশ ও নদী শাসন কাজের ৪৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২-এর ভৌত কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। জানা যায়, সোয়া ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুতে মোট পিলার সংখ্যা হবে ৪২টি। এর বিপরীতে নির্মাণ হয়েছে ১৪টি এবং ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২১৭টির কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতু এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ১ কিলোমিটার নদী শাসন করতে হবে। এর বিপরীতে নদী শাসনের কাজ শেষ হয়েছে আড়াই কিলোমিটার।
অন্যদিকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ (১ম সংশোধিত)-এর সার্বিক কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ১০৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
‘মেট্রো রেল লাইন-৬’ শীর্ষক প্রকল্পের ১নং প্যাকেজের কাজ শেষ হলেও ২ থেকে ৮নং প্যাকেজ কাজের ভৌত অগ্রগতি ২ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকার বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
‘দোহাজারী থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের দোহাজারী-চকরিয়া ও চকরিয়া-কক্সবাজার অংশের নির্মাণ কাজ এবং প্রকল্পের জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ১৩ শতাংশ। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ শীর্ষক প্রকল্পের মূল অংশ বাস্তবায়নের জন্য ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট চুক্তি সই করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকার বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৬৭৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
‘মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ শীর্ষক প্রকল্পের চ্যানেল ড্রেজিং-এর কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প কাজের প্যাকেজ ৪.২-এর আওতায় মাতারবাড়ি ১৩২/৩৩ কেভি সাব-স্টেশনের ২টি ২৫/৪১ এমভিএ ট্রান্সফরমার গত বছরের ২৬ জুলাই থেকে চালু হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
‘এলএনজি টার্মিনাল’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এলএনজিবাহি জাহাজ থেকে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল গত বছর শেষে চালু হওয়ার কথা ছিলো। আনোয়ার-ফৌজদারহাট ও চট্টগ্রাম-ফেনী বাখরাবাদ গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ চলছে।
‘রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ৬০০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রজেক্টের কাজ ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৬ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৭১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
‘পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর’ শীর্ষক প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। মূল বন্দরের অবকাঠামোকে ১৯টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় তৃতীয় লেটার অব ক্রেডিটের আওতায় ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব পায়রা পোর্টস মাল্টিপারপাস টার্মিনাল’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৯৮২ কোটি ১০ লাখ টাকার বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৬৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
‘সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর’ শীর্ষক প্রকল্পটি জি-টু-জি-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ/সংস্থা সন্ধানের প্রচেষ্টা চলছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও চীন প্রকল্পটিতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান