* ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ বেড়েছে * আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বেড়েছে * লোকসানি শাখা যা ছিলো তার অর্ধেক নেমে এসেছে ২ বছরের মধ্যে খেলাপিঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে আনা হবে : এমডি অগ্রণী ব্যাংক
মাসুদ মিয়া ও রমজান আলী : বর্তমানে ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রয়েছে ১৭ শতাংশ। তবে চলতি বছরে মধ্যে তের-চৌদ্দ শতাংশে নেবে আসবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সিঙ্গেল ডিজিটে আনা হবে এমনটাই জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। প্রতিবেদকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। যা থেকে আদায় করা হয়েছে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ থেকে ৯৭৮ কোটি টাকা ও অবলোপন থেকে ৪৭ কোটি টাকা আদায় করা হয়। এর মধ্যে নগদ আদায় হয় ৩৯৮ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে অগ্রণী ব্যাংকের আমানত ছিল ৫২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। সে হিসাবে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ। একইভাবে ২০১৭ সালে ঋণ ছিল ৩১ হাজার ৯১২ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। তাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ শতাংশ।
২০১৭ সালে আদায় করা হয়েছিল ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ আদায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৯৫০ কোটি টাকা, গত বছরে তা কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৯৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও মূলধন ঘাটতিতেও রয়েছে ব্যাংকটি। এসব হিসাব চূড়ান্তের পরই প্রকৃত মুনাফার হিসাব হবে।
২০১৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বেড়েছে। তবে কমেছে সুদবিহীন আয়। ২০১৭ সালে আমদানি বাণিজ্য হয়েছিল ১৩ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার, গত বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায়। ২০১৭ সালে রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছিল ৭ হাজার ৫৮ কোটি টাকার, গত বছরে তা বেড়ে হয় ৮ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। একইভাবে প্রবাসী আয়ও ১০ হাজার ৬০৫ কোটি থেকে বেড়ে গত বছর শেষে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকায়। তবে সুদবিহীন আয় ৪৪৯ কোটি থেকে কমে দাঁড়ায় ৩৯৯ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে লোকসানি শাখা ৪৪ ছিল যা ২০১৮ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২১টিতে বা প্রায় ৫০ শতাংশ।
অগ্রণী ব্যাংকের ৬ষ্ঠ তলায় উঠলেই চোখে পরে বঙ্গবন্ধু কর্নার একটি নামে একটি কর্নার। এই কর্নার নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। এব্যাপারে তিনি বলেন, নিজের ভাবনা থেকে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। আমি অগ্রণী ব্যাংকের জিএম (মহাব্যবস্থাপক) থাকা অবস্থায় আমাকে সিলেট ডিভিশনে দেয়া হলো সার্কেলটা দেখার জন্য। সেখানে তিনটি জোন ছিল- সিলেট ইস্ট, সিলেট ওয়েস্ট ও মৌলভীবাজর জোন। মৌলভীবাজার যখন গেলাম তখন দেখলাম জোনাল অফিসের জায়গাটা অনেক বড়। আমি বললাম, এত জায়গা। এখানে একটা লাইব্রেরির মতো করি। বঙ্গবন্ধুর ওপর যত বই আছে এখানে থাকবে। আমি একটা বুকসেলফ দেব। আর কিছু বই। তোমরাও কিছু সংগ্রহ করো। এটা হবে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’। আমি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বললাম, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। আর এর জন্য তার সম্পর্কে লেখা বই পড়তে হবে। তখন আমি একটা সেলফ দিলাম। ইসলামি ফাউন্ডেশন ও বাংলা একাডেমি থেকে বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা কিছু বই কিনে ওখানে করলাম। সেটা ছিল ২০০৯-২০১০ সময়। আবার ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকীতে স্মরণসভা ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সন্তানদের মাঝে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এর উদ্বোধন করা হয়। সেখানেও ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হয়। সে সময় আমি সে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলাম। তিনি বলেন, আমি যখন বঙ্গবন্ধু কর্নার করলাম অনেকেই এর সমালোচনা করেছে। অনেকে বলেছে, সরকার পরিবর্তন হলে তখন কী হবে? আমি তাদের বলেছি আমি তো কোনো রাজনৈতিক কাজ করিনি। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তাকে আমরা একটা শ্রদ্ধা জানাব না! এরপর যখন আমি অগ্রণী ব্যাংকের এমডি হলাম, তখন মনে হলো এটা নিয়ে আরও কাজ করার সময় এসেছে।
আমি আর্কিটেককে আগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আনলাম। তাকে বললাম, এখানে একটি ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ করা হবে। এরপর ১১৭ কেজি ওজনের ব্রোঞ্জ নির্মিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য্য স্থাপন করা হয়। রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রায় ৪০০ বই। বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত টাকা। বঙ্গবন্ধুর একটি বড় ছবি। এগুলো আজীবন থাকবে এখানে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার এটা দায়বদ্ধতা ছিল। আমার শ্রদ্ধাবোধ ছিল, সেটার সুযোগ আমি নিয়েছি। এখানে আমি কোনো ধরনের প্রাপ্তি চাই না।
এছাড়া তিনি আরো বলেন, এই রকম বঙ্গবন্ধু কর্নার সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাক। যেসব দেশে বাংলাদেশের এ্যাম্বাসিডর রয়েছে সেই দেশগুলোতে যাতে এই রকম বঙ্গবন্ধু কর্নার থাকে। তাহলে সেখানকার সবাই বঙ্গবন্ধুর সর্ম্পকে জানতে পারবে। সম্পাদনা : শাহীন চৌধুরী ও প্রিয়াংকা আচার্য্য