আবারো বিক্ষোভে পোশাক শ্রমিকরা, আশুলিয়ায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ
সুজন কৈরী : বেতন কাঠামোতে বৈষম্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে ৬ষ্ঠ দিনের মতো গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, টোলারবাগসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা। তবে পুলিশের সহযোগিতায় কারখানা মালিকদের আশ্বাসে দুপুরে সড়ক থেকে সরে যান শ্রমিকরা।
এদিকে সাভারের আশুলিয়ায় মজুরি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তা সংশোধন এবং সমহারে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও দফায় দফায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে ও জলকামানের ব্যবহার এবং লাঠিচার্জ করে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ন্যূনতম বেতন বাস্তবায়ন ও বৈষম্য দূর করার দাবিতে মিরপুর ১৪ নম্বর সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে ও টোলারবাগেও বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। মিরপুর মডেল থানার ওসি দাদন ফকির বলেন, কিছু দাবিতে শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ করেছে। তবে দুপুরের দিকে তারা সড়ক ছেড়ে দেয়। এই দাবিতে শেওড়াপাড়া ও ভাসানটেকেও বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিপুরের দারুস সালামের দ্য ফাইনারি লিমিটেড, অ্যাপারেল এক্সপোর্ট লিমিটেড, ডেভিলন, আহম্মেদ ফ্যাশনস ও গোল্ডেন গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রাস্তায় নামে। এতে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দুপুরের দিকে পুলিশের সহযোগিতায় কারখানাগুলোর মালিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেন। এতে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
বিক্ষোভ চলাকালে অভিযোগ উঠে, দ্য ফাইনারি লিমিটেডের আইরনম্যান মিল্টন ও অন্য আরেক শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে। তবে বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির দারুসসালাম জোনের অতিরিক্ত এসপি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছু দাবিতে শ্রমিকরা সকালে সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচলে বিঘœ ঘটেছিলো। তবে তাদের বুঝিয়ে দুপুরে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ফলে সড়কে আবারো যান চলাচল শুরু হয়। শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে কারখানার মালিকদের সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়। মালিক পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেন। একটি কুচক্রি মহলের উস্কানিতে শ্রমিকরা এমন বিক্ষোভ করছেন। আমরা ওই কুচক্রি মহলকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
এদিকে সাভার প্রতিনিধি এম এ হালিম জানান, সাভারের আশুলিয়ায় মজুরি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তা সংশোধন এবং সমহারে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে দফায় দফায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। পরে পুলিশ গিয়ে টিয়ারশেল ছোড়ে, জলকামানের ব্যবহার ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, শনিবার সকাল ৯টায় আশুলিয়ার বেরন এলাকার ইয়াগী বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা প্রথমে মজুরি বৈষ্যমের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আশপাশের স্টারলিংক ক্রিয়েশন, উইন্ডি গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া ও বেরন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ প্রথমে শ্রমিকদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকরা দাবি আদায়ে অনড় থেকে রাস্তায় অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ জলকামান, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করে প্রায় ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। এতে প্রায় ২০ জন শ্রমিক আহত হয়।
বেরন এলাকার শারমিন গ্রুপের এ এম ডিজাইন কারখানার শ্রমিকরা দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যাওয়ার পথে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা স্থানীয় বিভিন্ন শাখা সড়কে অবস্থান নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। কেউ কেউ আবার কারখানায় ফিরে এসে কাজে যোগদান করে। এ এম ডিজাইন কারখানার শ্রমিক আলামিন বলেন, বেতন কম হওয়ার পরও আমরা আন্দোলন না করে কাজ করায় দুপুরে খাবার খেতে বাসায় যাওয়ার পথে পার্শ্ববর্তী স্টারলিংক কারখানার আন্দোলনকারী শ্রমিকরা আমাদেরকে মারধর করে।
কারখানাটির মালিক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের কারখানায় কোনো সমস্যা নাই সবাই কাজ করছে। কিন্তু বহিরাগত শ্রমিকরা তাদেরকে মারধর করে আন্দোলনে অংশ নিতে বাধ্য করছে। হামিম গ্রুপের শ্রমিক শারমিন, পারভিন ও নাজমা আক্তার জানায়, বেতন বৈষম্যের অভিযোগে সাধারণ শ্রমিকরা আন্দোলন করায় কারখানার স্টাফ ও ভাড়াটে লোকজন আমাদেরকে মারধর করে আটকে রাখে। এসময় তারা বেশ কয়েকজন শ্রমিককে মারধর করে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জাকির হোসেন নামে এক স্টাফকে মারধর করে কারখানার ভিতরে পুকুরে ফেলে দেয়। পরে কারখানার লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন।
শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা শামীনুর রহমান বলেন, আশুলিয়া জামগড়া এলাকাসহ আশপাশের প্রায় ৩৫টি কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে যানবাহনে ভাঙচুর ও অবরোধ করে রাখে। এসময় তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে জলকামান থেকে গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ওই এলাকার পোশাক কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান