নির্বাচনের পর থেকেই চালের দাম বৃদ্ধি
মাসুদ মিয়া : নির্বাচনের পর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩-৫ টাকা। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির পেছনে মিলারদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের পর মিল পর্যায়ে কোনো বাজার মনিটরিং ছিল না। এ সুযোগে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এতে খেটে খাওয়া ও নি¤œআয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
চালের দাম বৃদ্ধির চার কারণ উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রথমত চাল আমদানি প্রায় বন্ধ। দ্বিতীয়ত সরকার আমনের চাল সংগ্রহ শুরু করেছেন। তৃতীয়ত নির্বাচনের কারণে অনেক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিপাকে ফেলার জন্য। ধানের জোগান কমে গেছে। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।
গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এবং মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয় দিন আগেও রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হতো ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা, এখন তা ৫৫ টাকা থেকে ৫৮ টাকা। ৪০ টাকা কেজির বিআর ২৮ ছিল ৪০ টাকা এখন ৪৫ টাকা। একইভাবে স্বর্ণা, নাজিরশাল, পোলাওসহ সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এদিকে মিল পর্যায়ে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫১ টাকা কেজি। সে চাল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগে মিনিকেট চাল মিল পর্যায়ে বিক্রি হয় ৪৮ টাকা। আর এ চাল কেজিতে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেন মিল মালিকরা। এক সপ্তাহ আগে একই চাল পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৪৯ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ে ৪ টাকা। এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৪৮-৫০ টাকা। খুচরা বজারে এই চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক। নির্বাচনের সময় পরিবহন চলাচলে দুয়েকদিন চাল সরবরাহে বাধা পড়তে পারে। কিন্তু এখন তো পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। এখনতো চালের দাম স্বাভাবিক থাকার কথা। কিন্তু এরপর দাম কমছে না। তাই সরকার সংশ্লিষ্টদের এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
রাজধানীর বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি নিজাম উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন কারণে মোটা ও চিকন চালের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে। এখানে দেশে বড় বড় মিল ও আড়তদাররা আছেন। তারা যদি সিদ্ধান্ত নেন, চালের দাম আর বাড়াব না, তাহলে আর বাড়বে না। তারা যদি বলেন, ১-২ টাকা চালের দাম কমবে, তাহলে কাল থেকেই কমে যাবে। কারণ সারাদেশে তারাই চাল জোগান দেন।
কারওয়ান বাজারের সোহেল রাইস এজেন্সির মালিকের ভাই হাজী রুমান বলেন, ধানের দাম বেশি, এই অজুহাতে মিল মালিকরা হঠাৎ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, বস্তা প্রতি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। এই ভাবে বাড়তে গত কয়েক দিনে বস্তায় ৩০০ টাকা বেড়েছে। তবে দেশে যে পরিমাণে চাল আছে তাতে চালের দাম বাড়ার কথা না। মিরপুরের খুচরা চাল বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে পরে যদি নিয়মিত বাজার ও মিল পর্যায়ে মনিটরিং করা হতো তাহলে দাম বাড়তো না। কিন্তু মনিটরিং না করায় মিল মালিকরা সুযাগ বুঝে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, খুচরা পর্যায়ে চাল মজুদের কোনো সুযোগ নেই। সপ্তায় সপ্তায় চাল এনে তাদের বিক্রি করতে হয়। এছাড়া মূলধনও সামান্য। নির্বাচনের আগে বেশ কয়েক মাস চাল নিয়ে কেউ দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়নি। সে সময় বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও কঠোর ছিলো।
একই বাজারের খুচরা পর্যায়ে থেকে চাল কিনতে কামাল হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে চালের দাম হাতের নাগালে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। যে কারণে আমাদের মতো দিনমজুরদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়া। তা না হলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হবে।
মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। বেশি দামে ধান কিনে মিলে আনুষঙ্গিক খরচ ধরেই চালের দাম নির্ধারণ করতে হয়। এতে বর্তমানে চালের দাম কিছুটা বাড়তি রেখে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরে চাল ব্যবসায়ী সমিতি, আড়তদার ও অটো মিল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের সহায়তা চেয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, দেশে বোরো ও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। এর পরও কেন চালের দাম বাড়ছে, আমরা তা জানি না। খাদ্যমূল্য স্থিতিশীলতায় আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। এ সময় বিভিন্ন জেলার চাল ব্যবসায়ীরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি পরিষ্কার বলতে চাই, যে দেশে খাদ্য মজুদ থাকে, সে দেশে হুটহাট খাদ্যের দাম বাড়তে পারে না। এটা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। যেকোনো মূল্যে চালের দাম স্বাভাবিক রাখতে কাজ করতে হবে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, মিল থেকে বেশি দাম কিনতে হয় তাই বেচতেও হচ্ছে বেশি দামে। অন্যদিকে বাজারে ধানের সঙ্কট থাকায় এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে পড়েছে বলে জানিয়েছেন মিলমালিকরা। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা আচার্য্য