৮ হাজার কোটি টাকার কর মওকুফ নিয়ে গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধি করেছে ১৫৩ কোটি টাকা
বিশ্বজিৎ দত্ত : গার্মেন্ট শ্রমিকদের গড়ে বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২০ টাকা। এই বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট মালিকদের বছরে ৪০ লাখ শ্রমিককে বেশি মজুরি দিতে হবে ১৫৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিসেম্বরেই গার্মেন্ট মালিকরা সরকারের কাছ থেকে কর মওকুফ নিয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিজিএমইএ গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) উৎসে কর কমানোর জন্য আবেদন করেছিলো। তাদের দাবি ছিলো, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিতে কারখানা সমস্যায় পড়বে। এ দাবিটি বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর ১ জানুয়ারি একটি এসআরও জারির মাধ্যমে গার্মেন্টের আয়ের উপর থেকে উৎসে কর ৩৫ পয়সা কমিয়ে দেয়। আগে ১০০ টাকা আয়ে উৎসে কর ছিল ৬০ পয়সা। এনবিআর কর কমিয়ে ২৫ পয়সায় নিয়ে আসে। এসআরওতে বলা হয় এই আদেশ কার্যকর হবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। উল্লেখ্য, গার্মেন্ট মালিকরা মোট আয়ের উপর উৎস্যে কর দিয়ে থাকেন। এটিই তাদের চূড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বিজিএমইর তথ্য অনুযায়ি, গতবছর বিজিএমই গার্মেন্ট রপ্তানি করে লাভ করেছে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার। এটিকে টাকায় রূপান্তর করলে গার্মেন্ট মালিকদের আয় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় উৎসে কর ৩৫ পয়সা কমিয়ে দিলে গার্মেন্ট মালিকরা বছরে কর ছাড় পেয়েছেন প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
এবিষয়ে এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, বিজিএমইর পক্ষ থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের উৎস্যে কর কমানো হয়েছিলো। তাদের দাবি ছিলো শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য উৎস্যে কর কমানোর প্রয়োজন। সরকার বিজিএমইকে উৎস্যে কর কমিয়ে দেয়। যা ২০১৪-১৫ সালেও ছিল ১০০ টাকায় ৩০ পয়সা। কিন্তু চলতি বছর তার চেয়েও ৫ পয়সা কমে ২৫ পয়সা করা হয়েছে।
অন্যদিকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ৬টি গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি করেছে সরকার। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বেতন বৃদ্ধি হয়েছে ৭৪৭ টাকা আর সর্ব নি¤œ ১৫ টাকা। এই বৃদ্ধির গড়ে শ্রমিকদের মোট বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২০ টাকা। বিজিএমইর হিসাবে এই খাতে ৪০ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। তাদের সবার বেতন যদি বৃদ্ধি করা হয় তবে মালিকদের মাসে শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন দিতে হবে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বছরে যার পরিমাণ হয় প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে সাবেক এনবিআর সদস্য ও অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, গার্মেন্ট মালিকদের শুধু কর ছাড়ই নয়, সরকার রপ্তানির উপর ৫ শতাংশ প্রণোদনাও দিয়ে থাকে। তার উপরে রয়েছে বন্ড সুবিধা। তারা বিনা শুল্কে পণ্য আমদানি করে। এই ধরনের প্রণোদনা বছরের পর বছর দেয়া কোন শিল্পের জন্যই ভালো না। কারণ তাতে শিল্পের ভীত তৈরি হয় না। গার্মেন্ট শিল্প আমাদের এখানে প্রায় ৩০ বছর অতিক্রম করেছে। এখনো যদি তাদের সরকারি প্রণোদনায় টিকতে হয় তবে বলতে হয় এটি কোন শিল্প হিসাবেই গড়ে ওঠেনি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান