সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহতের গুজবে সড়ক অবরোধ-ভাঙচুর আশুলিয়ায় আবারও সড়ক অবরোধের চেষ্টা শ্রমিকদের
সুজন কৈরী : মজুরি বৈষম্যের অভিযোগে আশুলিয়ায় অষ্টম দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেছে পোশাক শ্রমিকরা। প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এরপর পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ‘ধাক্কায়’ এক পোশাককর্মীর মৃত্যুর গুজবে সোমবার আমিনবাজারের তুরাগ এলাকার ‘ব্যান্ডো ইকো অ্যাপারেলস লিমিটেড’ কারখানার শ্রমিকরা প্রায় তিন ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা। পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের টানা অষ্টম দিনেও সোমবার সকালে কারখানার প্রবেশের পর সাড়ে আটটার দিকে শ্রমিকরা নরসিংহপুর এলাকার বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়। পাশাপাশি হ্যান্ড মাইকে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলে, যেসব শ্রমিকরা কাজ করবেন তারা কারখানার প্রবেশ করেন। আর কাজ না করতে চাইলে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। পুলিশের এমন ঘোষণার পর কিছু শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করলেও বাকিরা বাড়ি ফিরে যায়।
শিল্প পুলিশের এসপি সানা সামিনুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা সড়কে নেমে অবরোধ করতে চাইলে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সাভার প্রতিনিধি আব্দুল কাইয়ুম জানান, সরকার কতৃক মজুরি কাঠামো পুনঃনির্ধারনের পর সোমবার কাজে যোগ দিয়েছেন সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তবে যোগদানের কিছুসময় পর আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে যান।
সোমবার সকাল থেকেই সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে দল বেঁধে শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এর কিছু সময় পর আশুলিয়ার হামীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, এনভয়, মুন রেডিয়ান, সাফা, আইডিএস, এফএনএফ,আয়শাসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে যায়। তবে বের হওয়ার বিষয়ে শ্রমিকরা কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। এদিকে আশুলিয়ার মেডলার অ্যাপারেল্স ও রোজ নামে দুইটি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে মালিক পক্ষ। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের কাজে যোগদানের জন্য মাইকিং করছে ঢাকা জেলা পুলিশ।
এদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ‘ধাক্কায়’ শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে সোমবার সকালে সাভারের আমিনবাজারের তুরাগ এলাকায় সড়ক অবরোধ ও ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। ব্যান্ডো ইকো অ্যাপারেলস লিমিটেড নামক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ময়লার গাড়ি ভাংচুর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে দুই ঘণ্টা পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ব্যান্ডো ইকো অ্যাপারেলন্স লিমিটেডের এক শ্রমিক জানান, সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি সকালে আমিনবাজারের সালেপুর ব্রিজের কাছে ইউটার্ন নেয়ার সময় শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন শ্রমিকদের সঙ্গে ময়লার গাড়ির চালকের বাকবিত-া হয়। তর্কাতর্কির মধ্যে ময়লার গাড়ির চালকের ধাক্কায় মনোয়ারা নামের এক শ্রমিক পড়ে যান। ওই খবর পেয়ে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে সড়ক অবরোধ করে। মনোনয়ার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ওই সময় ময়লা বোঝাই বেশ কয়েকটি গাড়ি বলিয়ারপুরে ডাম্পিং পয়েন্টে যাওয়ার পথে শ্রমিকদের অবরোধের মুখে পড়ে এবং ভাংচুরের শিকার হয়।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি আবদুল আউয়াল বলেন, মনোয়ারা মারা যাননি। কিন্তু তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ওই ঘটনা ঘটায়। পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
কারখানার ব্যবস্থাপক (কমপ্লায়েন্স) মিল্টন কাজী বলেন, মনোয়ারাকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার গুরুতর কিছু হয়নি। শ্রমিকরা যেহেতু রাস্তায় বেরিয়ে গেছে, তাই কারখানায় আজকের মত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান