রিজার্ভ চুরি : এ মাসেই আরসিবিসি ও নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
আবু বকর : রিজার্ভ চুরির অবশিষ্ট ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল মামলার কার্যক্রম চুড়ান্ত করে দেশে ফিরেছেন। জানুয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাটি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সমঝোতার মাধ্যমে টাকা উদ্ধার সম্ভব নয়। এজন্য ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক (আরসিবিসি)-কে প্রধান আসামী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক’ (ফেড)-কে দ্বিতীয় আসামী করা হতে পারে। মামলা দায়েরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ল’ ফার্ম চূড়ান্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই মামলা পরিচালনায় ব্যয় হবে ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল সোমবার আমাদের অর্থনীতিকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে। এই ফার্ম দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের নের্তৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যান। আর, ৮ জানুয়ারি রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ঐ দলের সাথে মিলিত হন। ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার দেশে ফিরেছেন। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেখানে মামলা করা সম্ভব হবে।’ নিয়ম অনুযায়ী, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এ মামলা করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে প্রধান আসামি করা হবে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংককে (আরসিবিসি)। ল’ ফার্মের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে দ্বিতীয় আসামি করার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে গত নভেম্বরে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের (ফেড) পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়ে বলা হয়, ফেড বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব হতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে মোট ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট বার্তা পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১টি বার্তার বিপরীতে শ্রীলংকায় ২ কোটি মার্কিন ডলার এবং ৪টি বার্তার মাধ্যমে মোট ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চারজন গ্রাহকের হিসাবে প্রেরণ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) ৪টি হিসাবে জমা হয় সেই অর্থ। যা পরবর্তীতে একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনে পরিচালিত ক্যাসিনোতে চলে যায় এবং পরবর্তীতে তা একজন ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী কর্তৃক তুলে নেওয়া হয়। মোট ৮১ মিলিয়ন ইউএস ডলার আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট, মাকাতি সিটি শাখায় পরিচালিত ভূয়া হিসাবে স্থানান্তর হয়।
ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস-দেগুইতোকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ জানুয়ারি সাজা দিয়েছে দেশটির আদালত। সম্পাদনা : ইকবাল খান