মার্কিন ফেডের বিরুদ্ধে রিজার্ভ চুরির ক্ষতিপূরণ মামলা করতে যথোপযুক্ত প্রমাণাদি বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই
মনিরুল আলম : মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক বা ইউ এস ফেডের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তা করতে হবে ঘটনার দিন থেকে তিন বছরের ভিতরে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ঘটনার তিন বছর পূর্তি হবে আগামি ৩ ফেব্রুয়ারী। আমেরিকার স্থানীয় আইন অনুযায়ী ঐ দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘ড্যামেজ ক্লেইম’ এর মামলা করতে হবে কমার্শিয়াল কোর্ট-এ। মামলাটি হবে ‘ইনফর্ম কমার্শিয়াল কোর্ট’ এর আওতায়। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধরনের মামলায় যাবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। কারণ ইউ এস ফেডের বিরুদ্ধে মামলায় গেলে নিজেদের ত্রুটিমুক্ত প্রমাণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট দ্বিধা-সংশয়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম ও আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিউইয়র্কে সপ্তাহব্যাপী সফর শেষে মামলা না করেই ফেরত এসেছে। তাদের সাথে ছিলেন এই বিষয়ক আইনগত উপদেষ্টা আজমালুল হক কিউসি। তিনি অবশ্য ফিরবেন আরো ক’দিন পর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউ এস ফেডের বিরুদ্ধে মামলা করতে যথেষ্ট শক্ত তথ্য-উপাত্ত লাগবে যা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই। কারণ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব দায়-দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি এড়াতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক স্থানীয় মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করে ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ। যার আলোকে বাংলাদেশে ও ফিলিপাইনে একাধিক তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খোদ আমেরিকাতেও এফবিআই ও সিআইএ তাদের অপরাধ আইনে এই রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত করছে।
২০১৬ সালের ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারী সময়ের ভিতরে ইউ এস ফেড এ থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি হয়। এই চুরিতে উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুইফট কোড হ্যাকিং করার মাধ্যমে ঐ অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলংকায় পাচার করা হয়।
শ্রীলংকা কর্তৃপক্ষের সতর্কতায় বাংলাদেশ ব্যাংক সেখানে পাচার হওয়া ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত পায়। কিন্তু ফিলিপাইনের ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে ক্যাসিনোতে পাচার হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে বাধে বিপত্তি। এর অধিকাংশ টাকাই ক্যাসিনোতে খোয়া গেছে।
ফিলিপাইনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ, তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত আনা গেছে। আরও ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ওখানকার উচ্চ আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় আছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যংক নিজদেশে ও বহির্বিশ্বে নানাভাবে সমালোচিত হয়ে আসছে। এখন বাংলাদেশ চেষ্টা করছে কিভাবে চুরি যাওয়া পুরো অর্থ ফেরত পেতে পারে।
সম্পাদনা: ইকবাল খান, কামরুল হাসান।