সেচ কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজন আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
শাহীন চৌধুরী : দেশের সেচ কাজে ব্যবহৃত পাম্পগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়কে সাধারণত সেচ মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, আসন্ন এই সেচ মৌসুমে সারাদেশে ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৩১টি বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের জন্য ২ হাজার ৪০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এর ফলে সেচ মৌসুমে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট, গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৯৫৮ মেগাওয়াট।
এদিকে আসন্ন সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৬ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। একইসঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলাকে বিদ্যুৎ বিভাগ অনুরোধও জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন সেচ মৌসুমে পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ১৬ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দফতরকে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ১৪শ মিলিয়ন ঘনফুট। ন্যূনতম ১৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গ্যাসভিত্তিক যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্বিঘেœ উৎপাদন করতে সক্ষম, সেসব কেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। এছাড়া সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাপ বেশি হওয়ায় এই কে›েন্দ্র গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আসন্ন সেচ মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলাকে অনুরোধ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত গ্যাস পেলে সেচ মৌসুমের সময় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে জ্বালানি তেল পরিবহনর ক্ষেত্রে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করবে বিপিডিবি। একইসঙ্গে জ্বালানি তেল পরিবহনে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গ দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিও করবে বিপিডিবি। একইভাবে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সঙ্গে যোগযোগ করে কয়লার সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সমিতিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার মজুত রাখতে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে অন্তত দুই মাসের জ্বালানি তেল মজুত রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি তেল পরিবহন এবং বিদ্যুৎ স্থাপনা নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো এবং জেলা কমিটিগুলো যেন কার্যক্রম গ্রহণ করে, সেজন্য জেলা প্রশাসকদের এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাশাপাশি প্রতিবছরের মতো এ বছরও সেচ পাম্পে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান