বাড়ছে পোকার রেজিসটেন্স পাওয়ার, কমছে চাষির আয়
মতিনুজ্জামান মিটু : ক্রমান্বয়ে বাড়ছে পোকার রেজিসটেন্স পাওয়ার, স্বাভাবিক মাত্রায় কাজ হচ্ছে না। তাই বারবার অতিমাত্রায় কীটনাশকের নামে বিষ দিয়ে ফলাতে হচ্ছে সবজি ও ফল। এতে উদ্বেগজনক হারে কমছে সবজি চাষিদের আয়। বাড়ছে চাষি ও ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। রোগগ্রস্থ হয়ে পড়ছে দেশের মানুষ। একারণে দেশে উৎপাদিত সবজি রপ্তানিতেও আসছে না কাক্সিক্ষত সাফল্য। জেঁকে বসা এই সমস্যার বোঝা এখন ওপেন সিক্রেট। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক কিছু করার পরেও মহাক্ষতির এই দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না দেশের চাষি ও ভোক্তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কৃষি গবেষক, কৃষি সংগঠন ও কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে ভয়ংকর এসব তথ্য জানা গেছে। কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের বরাতে কৃষি তথ্য সার্ভিস জানায়, বাংলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতির চাষাবাদে উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক বিশেষ করে কীটনাশকের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে মাটিতে ও কৃষিপণ্যে কুপ্রভাব পড়েছে। অধিক ফলন পেতে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া ভালো ফলন পাওয়া যায় না বলে চাষিরাও এসবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে প্রায় সব মৌসুমে ব্যবহার করছে। কীটনাশকের সঙ্গে পোকার পরিচিতি দীর্ঘদিনের। বর্তমানে পোকামাকড় কীটনাশক প্রতিরোধ করার শক্তির অধিকারি হয়ে উঠেছে। তাই বর্তমানে অধিকমাত্রায় বিষ দেয়া ছাড়া সবজি ও ফল উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ পর্যবেক্ষণের ফলাফলের উদ্ধৃতি দিয়ে এই কৃষিবিদ জানান, বেগুনের পোকা বা অন্যান্য বালাই দমনের জন্য বেগুন চাষিরা প্রতি মৌসুমে প্রায় ১৫০ বার বা প্রতিদিন কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। অন্যান্য সবজি ফসলেও তারা প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করেন। এর ফলে পোকার মধ্যে কীটনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে উঠেছে, যে কারণে বারবার কীটনাশক ব্যবহার করেও পোকা দমন হচ্ছে না এবং এতে চাষের খরচ উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ায় সবজি চাষিদের আয় কমে যাচ্ছে।
সবজি চাষে বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। গত এক দশকে সবজি চাষের জমির পরিমাণ এবং উৎপাদন অনেক বেড়েছে। কিন্তু পোকামাকড় ও রোগবালাই থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য সবজি চাষিরা জেনে বা না জেনে যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার করেন।
কীটনাশকের বিষাক্ততায় চাষির স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে এবং যারা এসব সবজি খাচ্ছেন তাদের দেহে কীটনাশকের বিষক্রিয়া প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ যে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সবজি রপ্তানি করার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, বাদ যাচ্ছে না জীববৈচিত্র্য। বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুস ছালাম বলেন, দেশের মানুষের রোগগ্রস্থ হওয়ার জন্য রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের তৈরি সবজি ও ফলকে দায়ী করা যায়। সম্পাদনা : শাহীন চৌধুরী, রেজাউল আহসান