মোকামে চালের দাম কমলেও রাজধানীতে কোন প্রভাব নেই
মাসুদ মিয়া : মোকামে চালের দাম কমলেও রাজধানীর খুচরাও পাইকারী বাজারে তার কোন প্রভাব নেই। মোকামে প্রতিকেজিতে চালের দাম কমেছে ১ টাকা থেকে ২ টাকা। এর আগে গত সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম মানভেদে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে যায়। ধানের দাম পড়ে যাওয়ায় চালের বাজারেও দাম কমেছে বলে দাবি মিলমালিকদের। ধানের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে দেন মিলমালিকেরা। তবে গত দুই দিনে নতুন করে দাম বাড়েনি।
কুষ্টিয়া, জিনাইদাহ ও নওগায়ার, মিলমালিকরা জানান, ধানের বাজার গত শনিবারের পর থেকে কমতে শুরু করেছে। যেসব জেলায় ধানের বড় বড় আড়ত আছে, সেখানেও দাম পড়ে গেছে। প্রতি মণ ধানের দাম আগের চেয়ে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। ধানের দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচেও হেরফের হচ্ছে। এ কারণে চালের দাম কমিয়েছেন মিলমালিকেরা। কুষ্টিয়া দুই দিন আগে যে কাজললতা চালের বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকায়, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০ টাকা থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায়। আর সরু চালের (মিনিকেট) দাম বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা কমে গতকাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। বিআর ২৮ জাতের চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। তবে মোটা চাল আগের দামে, অর্থাৎ ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে হুট করে রাজধানীর ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে চালের ক্রয়াদেশ দিতে থাকেন। সেই সুযোগে বড় বড় মিলমালিকেরা দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে দাম বেড়ে যায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও।
এদিকে ধানের মোকামেও কমেছে দাম। চালকলমালিকেরা ধান কেনা কমিয়ে দেয়ার কারণেই দাম কমে গেছে বলে মনে করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
নির্বাচনের পর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩-৫ টাকা। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির পেছনে মিলারদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তবে এবার মিলমালিকরা ব্যাবসায়ীদের দায়ী করছেন। তারা মনে করেন, ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের দাম বাড়ান।
গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এবং মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়দিন আগেও রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হতো ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা, এখন তা ৫৬ টাকা থেকে ৫৮ টাকা। ৪০ টাকা কেজির বিআর ২৮ ছিল ৪০ টাকা এখন ৪৫ টাকা। একইভাবে স্বর্ণা, নাজিরশাল, পোলাওসহ সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এদিকে মিল পর্যায়ে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫১ টাকা কেজি। সে চাল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগে মিনিকেট চাল মিল পর্যায়ে বিক্রি হয় ৪৮ টাকা। আর এ চাল কেজিতে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেন মিল মালিকরা। এক সপ্তাহ আগে একই চাল পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৪৯ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ে ৪ টাকা।
কাওরান বাজারের সোহেল রাইস এজেন্সির মালিক বলেন, মোকামে চালের দাম আমাদের এখানে তথন এমনিতে কমে যাবে। পিরেরবাগ খুচরা চাল বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে পরে যদি নিয়মিত বাজার ও মিল পর্যায়ে মনিটরিং করা হতো তাহলে দাম বাড়তো না। কিন্তু মনিটরিং না করায় মিল মালিকরা সুযোগ বুঝে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম বলেন, খুচরা পর্যায়ে চাল মজুদের কোনো সুযোগ নেই। সপ্তায় সপ্তায় চাল এনে তাদের বিক্রি করতে হয়। তবে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলে খুচরা বাজারে চালের দাম কমে যাবে।
একই বাজারের খুচরা পর্যায়ে থেকে চাল কিনতে ফিরোজ বলেন, শুনছি মোকামে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু তার প্রভাবতো আমরা রাজধানীতে দেখতে পাচ্ছি না। কয়েকদিন আগেও চালের দাম হাতের নাগালে ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। যে কারণে আমাদের মতো দিনমজুরদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়া। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান