গ্যাসের বৈধ আবাসিক গ্রাহক ৩৮ লাখ : আগামী মাসে নতুন সংযোগ সম্পর্কিত প্রতিবেদন দাখিল
শাহীন চৌধুরী : বর্তমানে সারাদেশে গ্যাসের বৈধ আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩৮ লাখ। এরমধ্যে একক ভাবে শুধু তিতাসের বিতরণ এলাকায়ই রয়েছে ২৭ লাখ। বৈধ চাহিদাপত্র নিয়ে সংযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক। নতুন আবেদনকারীদের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার তিতাসের এলাকায়। সরকার বিল পাচ্ছেনা এমন অবৈধ গ্রাহক/সংযোগ আছে ৩ লাখেরও বেশি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এদিকে নতুন করে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে আগামী মাসের শেষ দিকে। এই প্রতিবেদন দাখিলে পরই জানা যাবে কোন নীতি মেনে কোন কোন ধরনের গ্রাহক আবাসিকে গ্যাস সংযোগ পাবেন। একইসঙ্গে এই পর্যালোচনা কমিটি এলএনজি (লিক্যুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) ও এলপিজি (লিক্যুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) গ্যাসের দামও নির্ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত ভাবে সবপক্ষই একমত। তবে দেশজ গ্যাসের সংকটের মধ্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানি ও রেশনিং করে বিভিন্ন খাতে গ্যাস সরবরাহ করার পরও দৈনিক গ্যাস ঘাটতি প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে আগামী মার্চ-এপ্রিলে সামিট গ্রুপের এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। সামিটের ভাসমান টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। আর তখনই মূলত সীমিত আকারে আবাসিকে সংযোগ শুরু হবে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশে এলএনজি গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয়েছে। দেশজ গ্যাসের সঙ্গে এলএনজি মিশিয়ে পাইপলাইনে দেওয়ার কারণে গ্যাসের সার্বিক দামও বেড়ে গেছে। ব্যয়বহুল এ জ্বালানির ব্যবহার ধাপে ধাপে বাড়াতে থাকবে। অন্যদিকে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। গ্যাস সংকট সামলাতে দীর্ঘদিন ধরে গৃহস্থালীতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু সব এলাকায়ই আবাসিক গ্যাস সংযোগের দাবি তীব্র। বিতরণ সংস্থাগুলোয় অনেক আবেদন জমা পড়ে রয়েছে। অনেক জনপ্রতিনিধিও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে জনগণকে কথা দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে জ্বালানি বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আবাসিকে কোন গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে, সেটি নিয়েই এখন পর্যালোচনা চলছে। ইতোমধ্যে ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়ে গেছে। অর্থাৎ সংযোগের জন্য টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষারত আবেদনকারীদের পাইপলাইনের গ্যাস দেওয়া হবে, নাকি যেসব বহুতল ভবনে ইতোমধ্যে সংযোগ রয়েছে। কিন্তু ভবনের সম্প্রসারিত অংশ বা বর্ধিত ফ্লাটগুলোতে গ্যাস নেই, সেগুলোতেও সংযোগ দেওয়া হবে- সেটাই এখন বিবেচ্য বিষয়। বর্তমান বিতরণ লাইনে সিস্টেম লস হচ্ছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। শহরে বিতরণ লাইন সম্প্রসারণও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করাই হচ্ছে কমিটির কাজ।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন যুক্তিতে ২০১০ সালের মধ্য ভাগ থেকে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রাখে সরকার। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কিছুদিনের জন্য শিথিল করা হলেও ২০১৫ সাল থেকে তা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পর্যালোচনা কমিটির প্রধান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আমরা কয়েকদিন হলো কাজ শুরু করেছি। পর্যালোচনা শেষে ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব। তিনি বলেন, আমরা এলপিজি ও এলএনজির দামও পর্যালোচনা করে নতুন মূল্য প্রস্তাব প্রদান করব। সম্পাদনা : ইকবাল খান