ড. জাহিদ হোসেন বললেন, বন্দরগুলোর দক্ষতা বাড়ানো গেলে পোশাক রফতানিতে আরও বেশি প্রতিযোগিতা করা যেতো
আমিরুল ইসলাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটা পোশাক পল্লী করতে পারলে চীনের ২শ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার আরও অনেক বেশি আমরা অর্জন করতে পারতাম। আমাদের বন্দরগুলোর দক্ষতা আরও বাড়লে লিড টাইমের ক্ষেত্রেও আমরা চীনের সাথে আরো বেশি প্রতিযোগিতা করতে পারবো বলে মনে করেন বিশ^ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পোশাকের ব্যবসা বাড়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমরা যে আইটেমগুলো উৎপাদন করি এগুলো কম মূল্যের। শ্রমনীতির লেবার ইনটেনসিভ আইটেমগুলো বেশি। আমাদের যেহেতু শ্রমিক অনেক সস্তা বিশেষ করে চীনের তুলনায়। সেকারণে সেখানে মজুরি বাড়ার কারণে অনেকে চীন থেকে সরে যাচ্ছে। হিসাব করলে দেখা যায় ২০২১ সালের মধ্যে চীন থেকে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট অন্য জায়গায় চলে যাবে। সেইটার কিছুটা সুবিধা আমরা পেয়েছি। আমাদের এখান থেকে কেনার প্রবণতা অনেক বেড়েছে যেহেতু চীন থেকে আমাদের এখানে অনেক সস্তা। এর মধ্যেও রানা প্লাজা ধসের মতো একটা ঘটনার পরে একটা ধাক্কা খেয়েছিলো আমাদের পোশাক খাত। সেসময় এক্সপোর্ট অনেক কমে গিয়েছিলো। তারপর যে সংস্কারগুলো করা হলো ন্যাশনাল প্লানেট অ্যাকশনের অধীনে। আইএলও, অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স এরা সম্মিলিতভাবে একটা সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত করেছে। শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং অধিকারের অনেক পরিবর্তন এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ পোশাক কারখানা বন্ধ করা হলো। বায়ারদের আস্থাটা আস্তে আস্তে পরে ফিরে এসেছে। যার কারণে আমরা দেখেছি গত দুই বছর পোশাক খাতে রফতানির মন্দাভাব থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। পুনর্গঠন যেটা হলো পোশাক খাতে সেটার ফলে বায়ারদের আস্থাটা এখন ফিরে আসছে। ইদানীংকালে যে প্রবৃদ্ধি আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তৃতীয় কারণ হলো, ২০০৮-২০০৯ সালে যে বিশ্বমন্দা গেছে সেটা থেকে আমেরিকার জিডিপি গ্রোথ এখন অনেক ভালো। যার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমেরিকার বাজারে আমাদের প্রচুর বিক্রি বেড়ে গেছে। সেখানে আমাদের কোনো শুল্ক সুবিধা না থাকলেও চাহিদা বেড়েছে। ইদানীংকালে যে চায়না-আমেরিকা বাণিজ্য যুদ্ধ সেটার কারণেও কিছু অর্ডার আমাদের এখানে চলে আসছে। যদিও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বা সঠিক তথ্য নেই। তারপর উপকরণের দামও কিছুটা কমেছে যার কারণে প্রফিট বাড়ছে। তারপর আমাদের এখানে ৮০টির মতো পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি হয়েছে। এগুলো বেশ প্রচার পেয়েছে। ইউরোপিয়ান বাজারের বায়াররা এসব নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা করে। এসব পরিবেশবান্ধব কারখানার যেসব দৃষ্টান্তগুলো আমরা স্থাপন করতে পেরেছি এগুলোর কারণে ভাবমূর্তি যেটা খারাপ ছিলো বাংলাদেশের এটার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
তিনি আরো বলেন, এখনো যেটা হয়নি সেটা হচ্ছে পোশাক খাতের ভেতরে তেমন কোনো বৈচিত্র্য আসেনি এখনো। এখনো চার পাঁচটা আইটেমের মধ্যে সীমিত বেশিরভাগ কারখানা, আমরা যা রফতানি করি। উদপাদিত পন্য গুলো আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে সাফল্য আমরা দেখাতে পারিনি। সেটার জন্য পরিবেশের দুর্বলতা প্রধানত দায়ী। সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে সরকারের একটা পল্লী করার কথা অনেকদিন ধরেই আলোচনার মধ্যে আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে কারখানা করা। একটা নির্দিষ্ট পল্লী আমরা করতে পারিনি। বাউশিয়াতে যে জায়গাটা দেয়া হয়েছে সেখানে অনেকে যেতে চাচ্ছে না। ওই ধরনের একটা ডেডিকেটেড জোন যদি করা যেতো তাহলে চাইনিজ ২০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার আরো অনেক বেশি বা হাই ভ্যালু এডিশনের ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনটা আরো ভালো হতো। এখনো বর্তমানকালে পোশাক খাতে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লিড টাইমটা। আমি সময়মতো ডেলিভারিটা করতে পারবো কিনা। অফশরিং টেনডেন্সি, বিনিয়োগকারীরা যেখানে খুব সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায় সেখানে গিয়ে তাদের কারখানাগুলো স্থাপন করে উৎপাদন করে তাদের বাজারে পণ্য নিয়ে আসতো। এখন এটার পরিবর্তন হয়েছে। নেয়ারশরিংয়ে চলে আসছে, লিড টাইম কমানোর জন্য। সময়মতো ডেলিভারি দিতে না পারলে পোশাক বিক্রি করা যায় না। সিজন যদি আমি ধরতে না পারি। যার কারণে আমেরিকার বাজার মেক্সিকো, তুরস্কে লোকেট করা একটু বেড়ে গেছে। সুযোগ আছে আমাদের বন্দরের দক্ষতা যদি বাড়ানো যায় তাহলে লিড টাইমের ক্ষেত্রেও আমরা প্রতিযোগী হতে পারতাম। সেটা এখনো হয়নি।