টমেটোর উৎপাদন বাড়লেও লাভের মুখ দেখছেন না কৃষক
ফাতেমা আহমেদ : জামালপুরের টমেটোর বাজার নান্দিনা। খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত বাজারটি। ভোর সকাল থেকেই খেত থেকে ছোট ছোট ভ্যানগাড়িতে বাজারে আসতে থাকে টমেটো। পরিবর্তন
টমেটো নামানো, বাছাই, বাক্সভর্তি ও ট্রাকে ওঠানোয় শ্রমিকদের দম ফেলার ফুসরত নেই। এখান থেকে প্রতিদিন অর্ধ শতাধিক ট্রাকভর্তি টমেটো যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।
হাইড্রোজ ও ফরমালিনমুক্ত এখানকার উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। শুরুর দিকে ১২শ থেকে ১৮শ টাকা মণ, বর্তমানে সাড়ে ৪শ টাকা মণ দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে টমেটোর দাম নেমে আসবে মণ প্রতি ১শ থেকে ৮০ টাকায়। মানে প্রতি কেজি ২ টাকা দরে টমেটো বিক্রি হবে এ বাজারে। চাহিদা থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে টমেটো চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।
এ অঞ্চলে টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে টমেটো চাষি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব কথা জানান।
স্থানীয় টমেটো চাষি ও কৃষি অফিস সূত্র জানায়, জামালপুরের সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বেশকটি ইউনিয়নের অসংখ্য চরে টমেটোর আবাদে ঝুঁকে পড়েছে এখানকানকার চাষিরা। বেলে-দোআঁশ মাটিতে টমেটো চাষের জন্য উর্বর। এবার সদর উপজেলায় ১৩শ হেক্টর জমিতে সফল, বিউটিফুল, উদয়ন ও উন্নয়ন জাতের টমেটোর আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ১শ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়। প্রতিবিঘায় উৎপাদন হয় প্রায় দেড়শ মণ টমেটো । বিঘাতে খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা। আসল দামও উঠে আসছেনা দাবি কৃষকদের।
সদর উপজেলার লক্ষীরচর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের টমেটো চাষি শেখ মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া (৪৫) জানান, ‘দেড় বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেছি। বিঘায় দেড়শ মণ টমেটো উৎপাদন হয়েছে। পলিথিন দিয়ে বিজতলার সেড তৈরি, বীজ রোপণ, জমি তৈরি, ভিটি তৈরি, চারা রোপণ, প্রতি চারার সাথে বাঁশের খুঁটি লাগানো, নিড়ানি, প্রতি সপ্তাহে পোকামাকড় দমনে কীটনাশক, কুয়াশা থেকে রক্ষা ও কীটনাশকসহ দফায় দফায় কামলা খরচ ও পরিবহনে ব্যায় সব মিলে যা খরচ হয় তাতে আসলও উঠে না।
জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাখাওয়াত ইকরাম বলেন, ‘এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা লোকসানের কথা যেভাবে বলছে, আসলে লোকসান হওয়ার কথা নয়। টমেটো সংরক্ষণ করা গেলে তাদের লাভ আরো বেশি হতো। সদর উপজেলায় সবজি হিমাগার স্থাপনে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। হিমাগার স্থাপন হলে টমেটোর চাষিদের শেষ মুহূূর্তে দাম কমে যাওয়ায় খেতের টমেটো খেতে নষ্ট হবে না।