১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০ ভাগ কাজ সমাপ্ত
শাহীন চৌধুরী : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়লা ভিত্তিক সবচেয়ে বড় পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। এই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটিতে স্থাপন করা হয়েছে টারবাইন, ট্রান্সফরমার, জেনারেটরসহ বেশীর ভাগ প্রধান প্রধান যন্ত্রপাতি। এখন চিমনি নির্মাণসহ কয়লা আমদানির প্রস্তুুতি চলছে। চলতি বছর আগস্ট মাসের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবশিষ্ট কাজ শেষ করে ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে প্রধান যন্ত্রপাতিগুলো বসানোর পর নির্মাণ করা হচ্ছে ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি। ইতোমধ্যেই চিমনির পায় ৩০ মিটার পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে প্রকল্পটিতে কর্মরত রয়েছেন দেশী-বিদেশী প্রায় তিন হাজার কর্মী। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা প্রয়োজন হবে দৈনিক ১৩ হাজার টন। এ হিসেবে বার্ষিক চাহিদা দাঁড়ায় ৪২ লাখ থেকে ৪৬ লাখ টন। আমদানিকৃত কয়লা খালাস করার জন্য আগুনমুখা নদীতে নির্মাণ করা হচ্ছে ৩৮৫ মিটার জেটি। এখন পর্যন্ত এ জেটিরও ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার পায়রায় এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল)। বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) এটি একটি যৌথ কোম্পানি। জানা যায়, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ বহন করছে বাংলাদেশ-চীন যৌথ কোম্পানি। বাকি ৭০ শতাংশ চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণে বহন করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি এবং জয়েন্ট ভেঞ্চারে নির্মিতব্য ২০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ২০১৭ সালের শেষদিকে নির্মাণকাজ শুরু করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে পায়রা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মাওলা বলেন, আমরা আগামী আগস্টের মধ্যে প্রথম ইউনিটের কমিশনিং করতে চাই। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তথা কয়লা আমদানির জন্য আমরা একটি খসড়া তৈরি করেছি। মতামতের জন্য খসড়াটি এই প্রকল্পে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত পেলেই ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে।
বিপিডিবি সূত্র জানায়, বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আইপিপি) সংখ্যা সরকারি কেন্দ্রের প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়াও রয়েছে ২৫টির বেশি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিপিডিবিকে আরো তিন থেকে পাঁচ বছর বিদ্যুৎ কিনতে হবে। পায়রা ও মাতারবাড়ীর মতো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে রেন্টাল কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রয়োজন হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বর্তমানে যে হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে দুয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে বাংলাদেশে কখনই উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ হবে না। সুতরাং রেন্টাল কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় অব্যাহত রাখতে হবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান