শাকসবজি না খেয়ে রাতকানায় ভুগে চশমা পরছে শিশুসহ অনেক মানুষ
মতিনুজ্জামান মিটু : সচেতনতার অভাবে পুষ্টি ও ভেষজগুণ সমৃদ্ধ শাকসবজি না খেয়ে শিশুসহ দেশের অনেক মানুষ রাতকানা রোগে ভুগে চোখে চশমা পরতে বাধ্য হচ্ছে। পুষ্টিবিদদের বরাতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের টেকনিক্যাল পর্টিসিপেন্ট নাহিদ বিন রফিক জানান, একজন পুর্ণবয়স্ক লোকের দৈনিক ২০০ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া দরকার। কিন্তু আলুসহ খায় মাত্র ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম। খাওয়ার এই গড়মিলে দেশের অধিকাংশ মানুষ দৈহিক ও মানসিক অসুখে ভুগছেন। এদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। এছাড়া দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ ভাগ লোক বিশেষ করে মেয়েরা লৌহের অভাবে রক্তস্বল্পতার শিকার। তিনি বলেন, একমাত্র ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে বছরে দেশের ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু অন্ধ হয়ে যায়। চোখে কম দেখার সংখ্যা আরো বেশি।
সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টির ঘাটতি যতনা তার চেয়ে বড় বাধা পুষ্টির উৎস সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং অসচেতনতা। যারা দিন আনে দিন খায় তারাই কেবল পুষ্টিতে ভোগে তা কিন্তু নয়। বিত্তশালী শিশুরাও বর্তমানে শাকসবজি না খেয়ে রাতকানায় ভুগে চোখে চশমা পরতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ হাতের কাছে পাওয়া কচুশাক, কলমিশাক, হেলেঞ্চা, সজিনাসহ নানারকমের বাহারি শাকসবজি অভাবীসহ সব মানুষকে পুষ্টি ও ভেষজগুণের চাহিদা সহজেই সরবরাহ করতে পারে। এই সঙ্গে রয়েছে; টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, আলু, মিষ্টি আলু, কাঁচকলা, পাটশাক, কলমিশাক প্রভৃতি।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই খাদ্য এবং পুষ্টিকে একই মনে করেন। আসলে এটি ভুল ধারণা। কারণ খাদ্য পুষ্টিকর নাও হতে পারে, তবে পুষ্টি অবশ্যই খাদ্য। সুস্থ্য-সবলভাবে বেঁচে থাকতে পুষ্টিকর খাবার খেতেই হবে। এর চাহিদা পূরণে শাকসবজির অবদান অনন্য। শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থসহ অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদান। সেই সঙ্গে আঁশে ভরপুর। এসব পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, খাবারে রুচি আনে। এছাড়া হজমশক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে যথেষ্ট সহায়তা করে।
যেমন সবজির মধ্যে টমেটো অন্যতম। পুষ্টিসমৃদ্ধ এ সবজিকে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই বিলাতি বেগুন নামে চেনে। টমেটো (পাকা) দেখতে খুবই আকর্ষণীয় এবং খেতে সুস্বাদু। কাঁচা ও রান্না উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। টমেটো দিয়ে টক তরকারি, সালাদ এবং প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা যায় সস, স্যুপ, জ্যাম, জেলি, কেচাপ, মোরব্বা এসব লোভনীয় খাবার। এর রয়েছে বহু গুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা টমেটোতে ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি আছে ৩৫১ মাইক্রোগ্রাম এবং ২৭ মিলিগ্রাম। আর ভিটামিন-বি, শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম ও লৌহের যথাক্রমে ০.৩৩ মিলিগ্রাম, ৩.৬ গ্রাম, ১.১ গ্রাম, ৪৮ মিলিগ্রাম এবং ০.৪ মিলিগ্রাম। প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে টমেটো ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিজেন উপাদান- লাইকোপেন, যা দেহকোষ থেকে বিষাক্ত ফ্রিরেডিক্যালকে সরিয়ে প্রোস্টেট ক্যান্সারসহ মূত্রথলি, অন্ননালি এবং অগ্রœাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি হৃদরোগকে করে প্রতিহত। টমেটো হজমের জন্য বেশ উপকারী। এর রস স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে দেহ ও দাঁতকে নিরোগ রাখে। টমেটোর রস কেবল স্কার্ভই নয়, রিকেটস এবং বেরিবেরি’র মতো কঠিন রোগের নিরাময় ঘটায়। টমেটো বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে দেহকে সজিব রাখে। এছাড়া শরীরের মেদ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহের শক্তিকে অটুট রাখে। সম্পাদনা : খালিদ আহমেদ