সাউথএশিয়ান মনিটর : দুই বিলিয়ন ডলারের একটি যৌথ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ রাখার জন্য চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে পাকিস্তান। ৬২ বিলিয়ন ডলারের চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) অংশ হিসেবে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণের কথা ছিল। পাকিস্তান দাবি করেছে যে এটা খুবই ব্যয়বহুল এবং এখনই এটা করার জরুরি প্রয়োজন নেই।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রী মাখদুম খসরু বখতিয়ার গত ডিসেম্বরে বেইজিংয়ে সিপিইসি সমন্বয় বৈঠকে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। সে সময় চীনের কাছে এই অনুরোধ করা হয় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার কিছু চীনা প্রকল্প যাচাই বাছাই করে দেখছে। যেগুলো বেশি ব্যয়বহুল এবং এখনই প্রয়োজন নেই, সেগুলো স্থগিত রাখার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে’। ‘গোয়াদর বন্দর এবং সিপিইসির পশ্চিম রুট – যেটার মাধ্যমে বালুচিস্তানের সাথে খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশ যুক্ত হবে, সেগুলোসহ আমাদেরকে আমাদের অগ্রাধিকারের দিকে নজর দিতে হবে’। ওই কর্মকর্তা জানান, সরকারের উপদেষ্টারা উল্লেখ করেছেন যে, অন্যান্য প্রকল্পগুলো থেকে আরও বিদ্যুৎ গ্রিডের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার যোগাযোগ করেও বখতিয়ারকে পাওয়া যায়নি। গত সেপ্টেম্বরে তিনি প্রথম জানিয়েছিলেন যে, পাঞ্জাবের রহিম ইয়ার খান কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বন্ধের চিন্তা ভাবনা করছে সরকার। পরে পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও জিং বলেন যে, নতুন সরকার যে সব পরিবর্তনের প্রস্তাব করবে, সেগুলো গ্রহণ করার ব্যাপারে বেইজিং উদার এবং ‘আমরা আমাদের এজেন্ডাকে অনুসরণ করে যাবো’।
ইসলামাবাদে চীনা দূতাবাসের ডেপুটি প্রধান লিজিয়ান ঝাও মঙ্গলবার বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘পরিত্যাগের’ ব্যাপারে বলেন যে, প্রকল্পটি অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে এবং সেটা করা হয়েছে আগের সরকারের আমলে। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আসাদ উমর রিপোর্টারদের বলেন যে: ‘সিপিইসি এখন অবকাঠামো পর্যায় থেকে জ্বালানি পর্যায় পার হয়ে বাণিজ্য ও শিল্প খাতের পর্যায়ে প্রবেশ করছে’।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এই প্রকল্পটি সিপিইসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যেটা থেকে পাকিস্তানের জাতীয় গ্রিডে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার কথা। নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন আগের সরকার এর উচ্চ ব্যয়ের জন্য এটাকে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চীনা প্রচেষ্টার কাছে তারা হার মেনেছিল। ওয়াশিংটন ভিত্তিক উড্র উইলসন সেন্টার ফর স্কলার্সের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, পাকিস্তান সরকার বুদ্ধিমত্তার সাথে বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং কয়লাসহ ব্যয়বহুল হাইড্রোকার্বন আমদানি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি এ ব্যাপারে সাহায্য করবে।
পাকিস্তানের জন্য বড় প্রশ্ন হলো কিভাবে তারা এই ঘাটতি পূরণ করবে। তারা কি সিন্ধুর মরুভূমিতে রিজার্ভ সন্ধান করবে? তারা কি পরিস্কার জ্বালানির আমদানি বাড়াবে? না কি দুইটাই করবে? সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ