গ্রেফতার আতঙ্কে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা, নির্দোষ কেউ শাস্তি পাবে না দাবি বিজিএমইএ’র
স্বপ্না চক্রবর্তী : সরকারের নির্দেশে নতুন মজুরি কাঠামোর সমন্বয়ের ফলে কাজে ফিরে গেলেও গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা। বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনের ফলে এক সপ্তাহ যাবত আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে মালিকপক্ষের দেওয়া মামলায় ঘরছাড়াও রয়েছেন অনেক শ্রমিক। চাকরিচ্যূত হয়েছেন অনেকেই। তবে একজন নির্দোষ শ্রমিকও শাস্তি পাবে না বলে জোর দাবি করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। জানা যায়, আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে সাভার ও আশুলিয়া থানায় দশটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাভার থানায় মামলা হয়েছে ২টি। গ্রেফতার হয়েছে ১৩ জন। আর আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে ৮টি। গ্রেফতার হয়েছেন ১২জন শ্রমিক। যদিও শ্রমিক নেতারা বলছেন, মামলা নাম উল্লেখ থাকা প্রায় সব শ্রমিকই চাকরিচ্যূত হয়েছেন তবে কারো নির্দিষ্ট নামে মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন সাভার মডেল থানার ওসি মো. আবদুল আওয়াল। তিনি বলেন, অজ্ঞাতনামা প্রায় আড়াই হাজার লোকের নামে মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়ে আন্দোলনের সাথে সক্রিয় থাকার প্রমাণ পাওয়া ১৩জনকে আমরা আটক করেছি। তাদেরকে কোর্টে চালান করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি হবে। একই কথা বলেন, আশুলিয়া থানার ওসি শেখ রিজাউল হক দিপু বলেন, আটককৃত ১২জন শ্রমিকই ভাংচুর-সংঘাতের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলো। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা সহিংসতার সাথে জড়িত অন্যদেরও আটক করার চেষ্টা করছি।
তবে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান আশ্বস্ত করেছেন, কোনো নির্দোষ শ্রমিককে গ্রেফতার করা হবে না। তিনি বলেন, কোনো নিরীহ শ্রমিককে হয়রানি করা যাবে না। শুধু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই বিশৃঙ্খলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নেওয়া যাবে। সেই নির্দেশনা মেনেই কয়েকটি কারখানা মামলা করেছে। কোনো নিরীহ শ্রমিককে হয়রানি করা হচ্ছে না। একই কথা বলেন বিজিএমইএ এর অপর নেতা মোহাম্মদ নাছির। তিনি বলেন, কারখানা মালিকদের সাথে আমরা কথা বলেছি। সাধারণ কোনো শ্রমিকের নামে মামলা না দিতে অনুরোধ করেছি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিও অনুরোধ করেছি আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের যেনো কোনো ধরণের হয়রানি না করে।
এদিকে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশারেফা মিশু অভিযোগ করেছেন, শুধু চাকরিচ্যূতই না, মামলার ভয়ে শ্রমিকরা বাড়ি-ঘরছাড়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুই একজনের নাম উল্লেখ করে যে শত শত শ্রমিকের নামে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে, এতে করে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে তাদের। এভাবে মালিকপক্ষ আর কতদিন শ্রমিকদেরকে অনিশ্চিয়তার মধ্যে রাখবে। শ্রমিকরা তো চুরি করে নি যে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হবে। নিজের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে এফএনএফ অ্যাপারেলস, আল গাউসিয়া গার্মেন্টস, নিট এশিয়া, ডনলিয়ন ১ ও ২, হলিউড গার্মেন্টস, এফজিএস ডেনিম, কেআরএফ গার্মেন্টসসহ সাভার-আশুলিয়ার আরও কয়েকটি কারখানা থেকে শ্রমিকরা চাকরিচ্যূত হয়েছেন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গায়েবি মামলা গ্রেফতার থেকে। চাকরিচ্যুত করার ন্যূনতম বিধানও মানা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তবে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, শ্রমিকদের চাকরিচ্যূত হওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত তার সংগঠন কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনায় বসার কথাও জানান তিনি। তিনি বলেন, শ্রমিক কেনো এখন পর্যন্ত কোনো শ্রমিক সংগঠনও আমাদের কাছে কারও চাকরিচ্যূত হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেনি। যদি এরকমটি হয় তাহলে আমরা অবশ্যই মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। নিরপরাধ কারো নামে মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের এডিশনাল আইজি আবদুস সালাম। তিনি বলেন, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার অভিযান চলছে। কোনো নিরীহ শ্রমিককে হয়রানি করা হচ্ছে না।