ঋণ নিতে হবে উপযোগিতা বিবেচনা করে, সহজ শর্তে এবং ঋণের টাকার সঠিক ব্যবহার করতে হবে, বললেন ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ
খায়রুল আলম : সরকারের সাবেক সচিব এবং এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেছেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ১৪.৩ শতাংশ , মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সহজশর্তের ঋণ পরিশোধ করতে বাংলাদেশ এখনো খেলাপি হয়নি । বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সাথে ডেট সার্ভিসিং-এর মাত্রার সম্পর্কটা মোটামুটি সহনশীল আছে। তবে ভবিষ্যতের জন্যে দিন দিন তা উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি বলেন, মাথা পিছু ঋণ ১৭ হাজার টাকার মতো হচ্ছে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত যে ঋণ ছিলো, তার হিসাব মতে। যেদেশের সিংহভাগ মানুষ নি¤œ ও মধ্যবিত্ত এবং ধনী ও দারিদ্রের আয় বৈষম্যের ব্যবধান ব্যাপক সেদেশে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমান ১৭ হাজার টাকা এমনিতেই যথেষ্ট বেশি। দেশি ঋণের মাথাপিছু হিসাব নিশ্চয়ই আরো অনেক অনেক বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বা বিগত দশ বছরে ঋণ নেয়ার পরিমাণ দেখলে বুঝা যায়, প্রচন্ডভাবে ঊর্ধ্বমুখী । ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ ছিলো , তা মাত্র গত কয়েক বছরে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময় বড় বড় প্রকল্পের জন্য এমন কঠিন শর্তের ঋণ নিতে হয়েছে , স্বল্পমেয়াদি , সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট হার্ডটার্ম প্রকৃতির এ সব ঋণের পরিশোধকাল যখন সামনে এসে পড়বে, তখন মাথা পিছু ঋণ পরিমাণ শুধু বাড়বে না, ডেট সার্ভিসিং চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এটি বেশ উদ্বেগজনক। কারণ বিদেশি ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প বা উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করতে অহেতুক বিলম্ব হয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় ঘাটতি থাকে , দুর্নীতিগ্রস্ততায় বাধা প্রাপ্ত হয়, তাহলে ঋণটি কোনো উপকারে আসে না। তখন অর্থনীতি একটি ডেট ট্রাপে পড়ে যেতে পারে। উন্নয়নশীল এমন অনেক অর্থনীতি এ অবস্থায় ডেট ট্রাপে পড়েছে। ডেট ট্রাপে পড়া হবে না, যদি যে লোন নিয়েছি বা যা নেয়ার পথে আছি, সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করা হয়। ঋণ নিয়ে উৎপাদনমুখী যদি কিছু করা হয়। ২০০৮ সালের আগে যে ঋণ নেয়া হয়েছিলো, তার সিংহভাগই দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদি সহজ শর্তের ঋণ ছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নেয়া ঋণগুলো, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট এবং কঠিন শর্তের ( সুদের হার বেশি ও পরিশোধকাল কম) নিয়েছে। যে ঋণ সরাসরি মানুষের উন্নয়ন ও আয়বর্ধক কাজের নয় কিংবা যথাসময়ে আউটপুট না আসে, তা অর্থনীতির জন্য ডেট ট্রাপের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তাই ঋণ নিতে হবে হিসাব করে, সহজ শর্তে এবং ঋণের টাকার সঠিক ব্যবহার করতে হবে।