ইউরোপীয় ফুটবলে জানুয়ারি দল-বদলের যত আয়োজন
স্পোর্টস ডেস্ক : ইউরোপের ফুটবল নিয়ে সারাবিশ্বের ভক্তমনে চলে নানা দোলাচল। আর দল-বদলের সময়টা তো একেবারে বাজ পাখির নজর দিয়ে রাখেন। কে গেলো, কে এলো এসবের খোঁজ না রাখলে যে ডাই হার্ড ভক্ত হওয়া যায় না! এখন চলছে জানুয়ারীর গ্রীষ্মকালীন দল-বদলের ঝটকা। ট্রান্সফার উইন্ডো খুলেছে বেশ কিছু দিন হল। বড় দলগুলো পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে তাদের দল। ইউরোপীয় ফুটবলের দল-বদলে কি অবস্থা হতে যাচ্ছে সেটা নিয়েই আজকের আয়োজন।
ম্যানচেস্টার সিটি : সিটির সকল পজিশনে বর্তমান কোয়ালিটি সম্পন্ন প্লেয়ার রয়েছে, তবে ডিফেন্সিভ মিড এবং লেফট ব্যাক তাদের দূর্বল জায়গা। পেপ গার্দিওলা যে ফরমেশনে খেলায় তাতে ডিফেন্সিভ মিড পিভট হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ দলের দরকারে এটাক এবং ডিফেন্স দুটোই সমান তালে চালানো। ফলে একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং ফিট ডিফেন্সিভ মিড জরুরী। এটা মাথায় রেখে দলের টার্গেট রয়েছে বেশকিছু। গার্দিওলার রাডারে রয়েছেন ইতালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল জর্জিনহো। তবে ডি ইয়ং এর জন্যও বিড করেছে তারা। তবে দল ছেড়ে যেতে পারেন কিছু তারকা। যেমন তরুন ফরোয়ার্ড ব্রাহিম ডিয়াজ দল ছেড়ে গেছেন রিয়াল মাদি্েরদ। মাঙ্গালা এই সিজনে একটি ম্যাচও খেলেনি। তিনিও সিটি ছাড়তে পারেন। এছাড়াও ফিলিপ্পে স্যান্ডলার এবং হেরেরা লোনে যেতে পারে। লিভারপুল : নতুন বছর মোটেও ভালো যাচ্ছে না লীগ লিডারদের। ইনজুরি সমস্যা ক্লপকে চিন্তায় ফেলেছে। লিভারপুলের বর্তমানে মাত্র ২ জন সেন্টারব্যাক রয়েছে। আরেকজন ইনজুরিতে। ট্রফি খরা কাটাতে সেন্টার ব্যাক কেনার কথা তারা ভাবছে। দলের টার্গেটে আছে সেন্টার ব্যাক অভাব পূরন। যদিও পুলসিচকে দলে ভিড়াতে ব্যর্থ হয়েছে তারা, বেনজামিন পাভার্ডের সাথে কথাবার্তা শুরু হলেও বায়ার্ন উড়িয়ে নিয়ে গেছে এই খেলোয়াড়কে। তাই নতুন কারো পিছনেই ছুটতে হবে এখন ক্লপকে।
লিভারপুল থেকে জানুয়ারীতে কোন বড় মহারথী দল ছাড়ছে না। তবে যেহেতু অনেক দলই স্ট্রাইকার খুঁজছে, সেহেতু ডিভোক ওরিগি এবং ডমিনিককে লোনে পাঠাতে পারে তারা।
চেলসি : সিজনের এতদিনে এটি পরিষ্কার যে চেলসির একজন তুখোড় স্ট্রাইকার দরকার। সারির নজর তাই উইন্ডোর বড় স্ট্রাইকার লিস্টে। দলের লক্ষ্য এখন একজন স্ট্রাইকার আনা। ডর্টমুন্ডের পুলসিচকে তারা দলে ভিড়িয়েছে এই উইন্ডোতে। তবে এই মৌসুমে সে চেলসিতে খেলছে না, আগামী মৌসুমের শুরু থেকে খেলবে। যেহেতু উইলিয়ান ও পেদ্রোর বয়স বাড়ছে সেহেতু একজন তরুণ মিডের দরকার হয়ে পড়েছিল।
ইতিমধ্যে সেস ফ্যাব্রিগাস মোনাকো’র উদ্দেশ্যে চেলসি ছেড়েছেন। ড্যানি ড্রিংকওয়াটার দল ছাড়তে পারেন যদি ফুলহামের নতুন দায়িত্ব নেওয়া রানেরী চায়। এদিকে লুডভিক চিক এবং ক্রিস্টিয়ান লোনে যেতে পারে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড : রেড ডেভিলসরা মোটেও স্বস্তিতে নেই। লীগে দলের অবস্থান মোটেও সুখকর নয়। যদিও নতুন কোচ ভালো কিছুরই আভাস দিচ্ছেন, তবে তাদের দরকার একজন সেন্টারব্যাক এবং রাইট উইঙ্গার। যেহেতু নতুন কোচের আগমনে কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে রেড ডেভিলসরা, নতুন পে�য়ার দলের ক্যালিবার ভারী করবে। যদি কলিডোও, কউলিবেলি, মিলান স্ক্রিনিয়ার অথবা নিকলা মিলানকভিচের মত ডিফেন্ডারকে পায় তবে তারা যেকোন রকম খরচ করতে প্রস্তুত।
আর্সেনাল : একজন ডিফেন্ডার মন্দ না, ২টা হলে ভালো হয়- এই হল গানারদের অবস্থা। ৪ ডিফেন্স ব্যবহার করা আর্সেনালের রয়েছে ৩ জন ফিট ডিফেন্ডার। এটাককে আরও মজবুত করতে দলের দরকার একজন ভালো স্ট্রাইকার। বিভিন্ন সোর্সের মতে চেলসির গ্যারি কাহিল এবং ম্যানইউ’র এরিক বেইলি আর্সেনালের রাডারে আছে। রিয়াল ভ্যালাডোলার ফার্নান্দো কেলিরোর ওপরও নজর আছে তাদের। তাছাড়া অ্যারন রামসি চলে গেছেন জুভেন্টাসে।
টটেনহাম : টটেনহামের দলের অবস্থান খুব একটা সুবিধার না। তিন নম্বর পজিশনে থেকে চাম্পিয়নস লীগ থেকে বাদ পড়া তারই প্রতিচ্ছবি। দলে আগেও প্লেয়ার কেনাবেচা নিয়ে সমস্যা ছিল, এখনও আছে। তই দলকে পাকাপোক্ত করতে উইন্ডো কাজে লাগাতে প্রস্তুত তারা। অ্যাস্টনভিলার জ্যাক গ্রেলিসকে সাইন করানোর চেষ্টায় আছে। এছাড়া বোর্নমাউথের নাথান একেও তাদের রাডারে আছে।
হটস্পারদের শিবির থেকে মুসা দেম্বেলে ইতোমধ্যেই চাইনিজ ক্লাব বেইজিং গুয়ান এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। স্ট্রাইকার ভিনসেন্ট হান্সসেনকে একবারও মাঠে নামায়নি কোচ। এছাড়া নকোনোডু খেলার সময় পাচ্ছেন না। তারা দল ছাড়তে পারেন।
বার্সেলোনা : বার্সেলোনা দল বেশ ছন্দেই আছে। তবে দলে একজন বড় মাপের সেন্টার ব্যাক দরকার। দলের স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজের অফফর্মও দলকে উইন্ডোতে নতুন স্ট্রাইকার খুঁজতে বাধ্য করছে। মউরিলো কিছুদিন আগে লোনে জয়েন করেছে বার্সাতে। ডিলিটের প্রাক্তন টিমমেট ফ্রাঙ্ক ডি ইয়ং এর ওপর নজর আছে তাদের। তবে ইতিমধ্যে পিএসজি থেকে রেবিওকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে তারা।
দলে মাত্র একজন সিনিয়র লেফটব্যাক রয়েছে, ফলে তরুন দলে কারও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে রাফিনহা অথবা কৌতিনহো যদি খেলার পূর্ণ সময় পেতে দল ছাড়েন তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
রিয়াল মাদ্রিদ : বিগত ৬ মাস অনেক ঝড়ই পোহাতে হয়েছে গ্যালাকটিকোসদের। মনে হচ্ছে দল বুড়িয়ে গেছে। দলের প্রাণভোমরা রোনালদোর ফেলে রাখা স্থান এখনও অপূরনীয় রয়েছে। ইতিহাসের বাজে অবস্থানে নাম লিখিয়েছে ইতিমধ্যে। উত্তোরনের চেষ্টায় তাদের সবচেয়ে আলোচিত টার্গেট হল নেইমার এবং এমবাপ্পে। তবে চেলসি ম্যাজিশিয়ান হ্যাজার্ডের ওপরও নজর রাখছে তারা। দলের দুর্দিনে সুসংবাদ হল ইয়ং ট্যালেন্ট ব্রাহিম ডিয়াজকে সাইন করিয়েছে তারা।
আবার কিছু সোর্সের মতে রিয়াল প্রোডাক্ট লরেন্টে জানুয়ারীতে দল ছাড়তে পারেন। বড় তারকা যেমন ইস্কো, নাভাসও দলের খেলা নিয়ে নাখোশ। তবে দলের অবস্থা খুব বেগতিক না হলে তারা দল ছাড়ছেন না। কিন্তু মার্সেলোকে সাইন করতে উঠে-পড়ে লেগেছে জুভেন্টাস। যদিও যাওয়ার প্রশ্ন মার্সেলো উড়িয়ে দিয়েছে।
জুভেন্টাস : রোনালদো বলেই ফেলেছিলেন যে তাদের দলে সবকিছুই রয়েছে আর কারও দরকার নেই, যেকোন চ্যালেঞ্জ নিতে তারা প্রস্তুত। তবে মার্সেলোর জন্য দরজা সবসময় খোলা। সুতরাং উইন্ডো কোন ঘটন, অঘটন ছাড়াই শেষ করতে পারে জুভেন্টাস। মার্সেলোর জন্য তারা যে কোন ডিল করতে প্রস্তুত। যদিও তাদের প্রাক্তন প্লেয়ার পগবাও দলে ফিরতে চাচ্ছে কোন কোন সোর্সের মতে। এটি সম্ভব হতে পারে দাম ও শর্ত ঠিক থাকলে।
কিন্তু এরই মধ্যে সেন্টারব্যাক বেনেটিয়া এবং ড্যানিয়েল দুইজনই দল ছাড়ার ইচ্ছা পোষন করেছেন। কারণ দেখিয়েছেন তারা ঠিকমত খেলার সময় পাচ্ছেন না বলে। এছাড়াও তাদের লেফট ব্যাক সন্দ্রোর ওপর নজর আছে অনেকের। ভালো দাম পেলে তাকেও ছাড়তে পারে তুরিনের বুড়িরা।
বায়ার্ন মিউনিখ : বুন্দেসলিগার লীগ লিডার ডর্টমুন্ড থেকে ৯ পয়েন্ট পিছনে রয়েছে গতবারের লীগ চাম্পিয়নরা। এটিই দেখিয়ে দেয় দলটির ভঙ্গুর অবস্থান। তাই বায়ার্ন কিছু নতুন সাইন করাতে চায় লীগের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে। বায়ার্ন ১৮ বছর বয়সী আলফন্সো ডেভিস, পাভার্ডকে সাইন করিয়েছে। এছাড়াও ডিফেন্ডার ডি ইয়ং এবং রামসি’র দিকেও নজর আছে তাদের। তবে ডি ইয়ং এর ব্যাপারে তারা বেশি আশাবাদী।
যদিও রদ্রিগেজ বায়ার্ন ছেড়ে রিয়ালে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করেছেন, কিন্তু দল ভালো কাউকে না পেলে তাকে ছাড়তে নারাজ। তবে তাদের স্ট্রাইকার সান্দ্রো ও ওয়াগনার দল ছাড়তে পারেন। আর যদি পাভার্টের সাইন হয়ে যাওয়ার পর বেয়েটাং অথবা ম্যাট হামেলস দল ছাড়তে পারেন। নিয়ন, মার্কা, ইএসপিএন