সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন ও আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রক্ষেপণের কাজ শুরু
সোহেল রহমান : সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের ব্যয় চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার মধ্যে রাখা এবং উন্নয়ন ব্যয়ের অব্যয়িত কোন অর্থ কোনক্রমেই পরিচালনা বাজেটে স্থানান্তর না-করার নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রলায়ের অর্থ বিভাগ। তবে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার মধ্যে বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিট বা আইটেমের বরাদ্দ বাড়াতে বা কমাতে পারবে।
জানা যায়, মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোর আওতায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন ও আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রক্ষেপণে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর জন্য ২৫টি নির্দেশিকা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এসব নির্দেশিকায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এদের অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থাসমূহকে চলতি অর্থবছরের বিদ্যমান বাজেট কাঠামোর সংশোধিত/হালনাগাদ তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। হালনাগাদ প্রতিবেদনে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এদের অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থাসমূহের রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা, প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা ও উন্নয়ন ব্যয়ের বিস্তারিত প্রাথমিক প্রাক্কলন এবং আগামী অর্থবছরের প্রক্ষেপণ জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত: চলতি অর্থবছরের বাজেট উপাত্তে পরিচালন ও উন্নয়নসহ মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন কার্যক্রম খাতে মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মূল বাজেটে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের পরিচালন কার্যক্রম খাতে ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহকে পূর্ববর্তী দুই অর্থবছরের (২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮) প্রথম ছয় মাসের ও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের প্রকৃত ব্যয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় নির্ধারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের প্রকৃত ব্যয় বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরের ক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেশি প্রস্তাব করা যাবে। পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি ছাড়া সরবরাহ ও সেবা খাতে অন্তর্ভূক্ত কোন আইটেমের বরাদ্দ বাড়ানো যাবে না এবং মূল বাজেটে সংস্থান নেইÑ এমন কোন সম্পদ সংগ্রহের জন্য সংশোধিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখা যাবে না। এছাড়া চলতি অর্থবছরে অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে কোন অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে এটি উল্লেখ করতে হবে।
চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের অনুকূলে মোট উন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)-তে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখা এবং বরাদ্দবিহীন কোন প্রকল্প না-রাখার নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অননুমোদিত কোন স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দের কোন প্রস্তাব করা যাবে না। তবে মোট অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত স্কিমের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে চলমান স্কিম এবং ইতোমধ্যে অনুমোদিত নতুন স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব সংশোধিত প্রাক্কলনে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। এডিপি বহির্ভূত যেসব প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে এবং যেগুলোর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেগুলো সংশোধিত এডিপি-তে বরাদ্দসহ অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। পাশাপাশি সংশোধিত এডিপি-তে দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক ও মানব সম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত খাতসমূহকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া প্রকল্প বাছাইয়ে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প, ঘুর্ণিঝড় ও বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্প এবং চলতি অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতাধীন একই উদ্দেশ্যে বা একই প্রকৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্পগুলো পৃথক পৃথকভাবে না দেখিয়ে গুচ্ছ প্রস্তাবাকারে উল্লেখ করতে হবে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট উপাত্তে পরিচালন ও উন্নয়নসহ মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ থেকে মোট রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৬৪২ কোটি টাকা। কিন্তু গত নভেম্বরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ থেকে মোট রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৫ কোটি ৭০ লাখ ১৮৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে জানা যায়। সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের রাজস্ব আদায়ের ধারা বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত প্রাক্কলন তৈরি করতে হবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান