ওয়ার্নারের চোখে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমস্যা
রাকিব উদ্দীন : বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ষষ্ঠ আসরে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলা ডেভিড ওয়ার্নারের বিদায় ঘন্টা বাজছে। খুব করে বিপিএলে খেলা চালিয়ে যেতে চাইলেও হাতের ইনজুরি তার পক্ষে কথা বলছে না। এর আগে স্টিভ স্মিথ এসেছেন, ফিরেও গেছেন সেই ইনজুরির কারণে।
ক্রিকেট বিশ্বের দুই মহাতারকা বিপিএলে তিন সপ্তাহ কাটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক কিছুই জেনেছেন, দেখেছেন। ক্রিকেটারদের ফিটনেস, খেলোয়াড়ী চরিত্র, মানসিকতা, ম্যাচ সচেতনতা… সাত ম্যাচ খেলে কিছুটা হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বুঝতে পেরেছেন ওয়ার্নাররা।
দুই ম্যাচ খেলে দেশে ফিরে যাওয়া কুমিল্লার অধিনায়ক স্মিথ দুই ম্যাচেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন পেশাদারিত্ব কি জিনিস। মাঠে বড় নাম নয়, পারফর্মেন্সই মুখ্য, সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আরেকটু বড় পরিসরে একই কাজ করেছেন ওয়ার্নার। প্রথম ম্যাচ থেকেই সিলেট সিক্সার্স দলকে একই ছাতার নিয়ে এসেছেন। মাঠে দেখিয়েছেন দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব ও দলীয় চেতনা। স্থানীয় ক্রিকেটারদের সামর্থ্যে বিশ্বাস রেখেছেন, বের করে আনার চেষ্টা করেছেন সেরা পারফর্মেন্সটি। একই সাথে অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগত পর্যায়েও বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চেনার চেষ্টা করেছেন। সতীর্থ ও দলের বাকি সদস্যদের জন্য পারফর্মেন্স দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। ওয়ার্নার চোখ খুলে দিয়েছেন অনেক স্থানীয় ক্রিকেটারের। তাই তো টুর্নামেন্টের মাঝপথে দেশ ছাড়ার আগে কিছু উপদেশ দিয়ে গেছেন দলের প্রতি, আরেকটু গভীর দৃষ্টিতে দেখলে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সংস্কৃতিতে সাধারণত অধিনায়ককেই চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী ধরা হয়। বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই ক্রিকেট সংস্কৃতি থেকে উঠে আসা ওয়ার্নারের জন্য দলকে নেতৃত্ব দেয়ার স্টাইল বাংলাদেশি ক্রিকেটের সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ওয়ার্নার ইঙ্গিত দিয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিপিএলে নিজের শেষ ম্যাচ খেলার পর। রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ওয়ার্নার তার দলের ক্রিকেটারদের প্রতি বলেছেন, ‘সাধারণ ম্যাচ সচেতনতা, দলের সবাই সবসময় অধিনায়কের দিকে লক্ষ্য রাখে না। অবশ্য ছেলেরা শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করছে, এটা নিয়ে সংশয় নেই।’ বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের সবচেয়ে নিচু স্তরেই সাধারণ ম্যাচ সচেতনতার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা যে কোনো পেশাদার ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট মাঠে অধিনায়কেরও দেখানো নির্দেশনায় সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা আমাদের দেশীয় ক্রিকেটারদের! বলার অপেক্ষা রাখে না, টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে গত দশ বছরের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের একজন যদি এভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা দেখিয়ে দেয়, তাহলে বলতেই হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের গোড়ায় গন্ডগোল আছে।