গার্মেন্টের মজুরি নিয়ে শ্রমিক ও মালিক সংলাপ ৮০ শতাংশ কারখানায় মাথাপিছু পণ্য গুণে বেতন হয় মালিকরা বললেন, প্রমাণ দিন ব্যবস্থা নিব
বিশ্বজিৎ দত্ত : দেশের ৮০ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের মাথাপিছু কাজ দেয়া হয়। অর্থাৎ শ্রমিকদের বলা হয় এই সংখ্যক কাজ শেষ হলেই ছুটি মিলবে। এটা না করা হলে শ্রমিকদের চাকুরি থাকেনা। গতকাল সিপিডি আয়োজিত গার্মেন্ট খাতের মজুরি বৃদ্ধি বিষয়ক এক সংলাপে মালিকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন শ্রমিক নেতারা।
এ বক্তব্যকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বিজিএমই্এর সভপাতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোন কারখানা এমন কাজ করলে, তার নাম দিন আমরা ব্যবস্থা নিব। জবাবে শ্রমিক নেতারা বলেন, কারখানার নাম বললে আমাদের পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে পঙ্গু করে দেবে মালিকরা। যদি জীবনের নিরাপত্তা দেন তবে সব কারখানার নাম দিতে পারবো। এ নিয়ে শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হলে সংলাপের উপস্থাপক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পরে আমাকে নাম দিয়েন তবে জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারবোনা।
শ্রমিক নেতার বলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানায় ৩০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। সাড়ে ৫ হাজার শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। তারা মালিকদের বলেন, আপনারা মামলা উঠিয়ে নেন। চাকুরিচ্যুত শ্রমিকদের কাজ দিন। জবাবে, সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মামলা করেছে পুলিশ ভাংচুরের অভিযোগে। অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। এখানে আমাদের করার কিছুনেই।
শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের কাছ থেকে ট্যাক্সসহ অনেক সুবিধাও পাচ্ছে মালিকরা। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে গড়িমসি করছে।
শ্রমিকনেতা মন্টু রায় বলেন, সব সময় শ্রমিক আন্দোলনকে বলা হয়, একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন মহলকে গ্রেপ্তার করতে দেখলাম না।শুধু শ্রমিকদেরই গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি শ্রমিকেদর উপর থেকে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
আলোচক হিসাবে ডা. জাফরুল্লা বলেন, সরকার মালিকদের কর্পোরেট ট্যাক্স না কমিয়ে সেই টাকায় শ্রমিকেদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারে। এমনকি বাংলাদেশের যতগুলো ওষুধ কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন করে এই টাকায় তা ক্রয় করা যায়। এফসিসিআইর সভাপতি শফিউল আলম মহিউদ্দিন বলেন, গার্মেন্ট খাতের আমাদের প্রতিদন্দ্বি দেশ ডলারের অবমূল্যায়ন করেছে। আর আমাদের দেশে ডলারকে শক্তিশালি করা হচ্ছে। এতে আমরা প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাচ্ছি।
সংলাপের সভাপাতি ড, রেহমান সোবহান বলেন, সরকার যেভাবে সরকারি কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। সেভাবে বেসরকারিখাতের বেতন বাড়েনি। এতে সমাজে বৈষ্যমের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ২৫ বছর যাবত শ্রমিকরা আন্দোলন করে পরে তাদের বেতন বৃদ্ধি হয়। এই দৃশ্যই দেখে আসছি। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির একটি নিয়মিত কমিটি থাকা দরকার। এরএকটি পরিকল্পনা থাকা দরকার।
শ্রমিকনেতারা গার্মেন্টে ট্রেড ইউনিয়ন নেই বলেও অভিযোগ করেন, জবাবে এফবিসিআিই ও বিজিএমই্এর সভাপতি নেতাদের বলেন, আমরা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিব। কিন্তু আগে একটা নির্বাচন দেই যাতে শ্রমিকরা নেতাদের চান না মালিকদের চান।
পরিশেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেন, তিনি নিজের গার্মেন্ট চালাতেই গত মাসে ৫৭ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছেন। কারণ ওয়েজ বৃদ্ধির সঙ্গে ক্রেতারা পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি করেনি। তিনি বলেন, শ্রমিকদের অবস্থার এখন উন্নতি হয়েছে। তারা গার্মেন্টে কাজ করে এখন বাড়িতে পাকা বাড়ি করছে। রংপুরের উদাহরণ দিয়ে বলেন, রংপুরের ইটখলাগুলো চলেই গার্মেন্ট শ্রমিকদের ইট কেনার টাকা দিয়ে।