সাড়ে ৮০ কোটি ডলার ব্যয়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল কিনবে বিপিসি
সোহেল রহমান : চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন প্রান্তিকে সরকার-টু-সরকার (জি-টু-জি) পর্যায়ে ৭টি দেশের আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে চার ক্যাটাগরির মোট ১৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার। এতে আনুমানিক ব্যয় হবে ৮০ কোটি ৬৭ লাখ ৬৯ হাজার ডলার। এর মধ্যে রেফারেন্স মূল্য অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য বাবদ ব্যয় হবে আনুমানিক ৭৭ কোটি ৩০ লাখ ২৭ হাজার ডলার এবং প্রিমিয়াম বাবদ মোট ব্যয় হবে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৪২ হাজার ডলার। ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন’ (বিপিসি)-এর নিজস্ব অর্থেই এ আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হবে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিক্রয় প্রবণতা ও মজুদ বিবেচনায় ২০১৯ সালে দেশে চার ক্যাটাগরির মোট ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্ভাব্য প্রাপ্তি বাদে মোট জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে ৫৫ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে আমদানি করা হবে প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশে জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার অর্ধেক জি-টু-জি-এর আওতায় এবং অবশিষ্ট অর্ধেক আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে আমদানি করা হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী, জি-টু-জি পর্যায়ে ৭টি দেশের আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে চার ক্যাটাগরির মোট ১৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করবে বিপিসি। এর আগে গত বছরের শেষ দিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন প্রান্তিকের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে চার ক্যাটাগরির মোট ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
বর্তমানে জি-টু-জি-এর আওতায় চার ক্যাটাগরির জ্বালানি তেলের মধ্যে গ্যাস অয়েলের পরিমাণ ১১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন (৮৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ ব্যারেল, ব্যারেল প্রতি প্রিমিয়াম ২.৯৫ ডলার), জেট এ-১ ফুয়েল ১ লাখ মেট্রিক টন (৮ লাখ ব্যারেল, ব্যারেল প্রতি প্রিমিয়াম ৩.৯৫ ডলার), মোগ্যাস ৩০ হাজার মেট্রিক টন (২ লাখ ৫৮ হাজার ব্যারেল, ব্যারেল প্রতি প্রিমিয়াম ৫.৫০ ডলার) ও ১ লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল (প্রতি মেট্রিক টনের প্রিমিয়াম ২৯.৭৫ ডলার) আমদানি করা হবে।
জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাবে উল্লেখিত রেফারেন্স মূল্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জি-টু-জি-এর মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে ব্যারেল প্রতি প্রিমিয়াম হার উন্মুক্ত পদ্ধতিতে আমদানির তুলনায় সামান্য বেশি। তবে প্রিমিয়াম হার গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় কম। চলতি জানুয়ারি-জুন প্রান্তিকের জন্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে আমদানির ক্ষেত্রে গ্যাস অয়েলের ব্যারেল প্রতি প্রিমিয়াম ২.৮৬ ডলার, জেট এ-১ ফুয়েলের ব্যারেল প্রতি প্রিমিয়াম ৩.৬৬ ডলার ও মোগ্যাস-এর ব্যারেল প্রতি প্রিমিয়াম ৪.২১ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চার ক্যাটাগরির জ্বলানি তেলের মধ্যে ফার্নেস অয়েলের প্রিমিয়াম হার ক্রমাগত বাড়ছেই। গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে জি-টু-জি-এর আওতায় ফার্নেস অয়েলের প্রিমিয়াম হার ছিল ১৯.৭০ ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন প্রান্তিকের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলের প্রিমিয়াম হার ধরা হয়েছে ২২.৩০ ডলার। আর বর্তমানে জি-টু-জি-এর আওতায় প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলের প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯.৭৫ ডলার। অর্থাৎ প্রতি মেট্রিক টনে প্রায় সাড়ে ৭ ডলার বেশি।
তবে প্রিমিয়াম হার একটু বেশি হলেও জি-টু-জি-এর আওতায় সার্বিকভাবে আমদানি ব্যয় কিছুটা কম। রেফারেন্স মূল্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন প্রান্তিকের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে চার ক্যাটাগরির মোট ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানিতে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৯৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অন্যদিকে বর্তমানে জি-টু-জি-এর মাধ্যমে চার ক্যাটাগরির মোট ১৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে আনুমানিক ব্যয় হবে ৮০ কোটি ৬৭ লাখ ৬৯ হাজার ডলার। অর্থাৎ ব্যয় কমছে প্রায় ১৮ কোটি ডলার। সম্পাদনা : ইকবাল খান