ড. জাহিদ হোসেন বললেন, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগগুলো বাস্তবে পরিণত করতে দুপক্ষকে সমঝোতার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে
আমিরুল ইসলাম : বিশ^ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, সৌদি আরবের কয়েকশো কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনাসহ প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগগুলো বাস্তবায়িত করার জন্য দু’পক্ষকে সমঝোতার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিনিয়োগের প্রয়োজন আমাদের দেশে অনেক। শুধু অবকাঠামো নেই সর্ব ক্ষেত্রেই। জ¦ালানি, অবকাঠামো, শিল্প খাত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বিনিয়োগের চাহিদা প্রচুর। আমাদের দেশীয় সঞ্চয়ের ভিত্তিতে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। জিডিপির অনুপাতে সঞ্চয়ের হার ৩০ শতাংশের নিচে বিনিয়োগের প্রয়োজন ৩৫ শতাংশের ওপরে। সেদিক থেকে বিদেশি বিনিয়োগের প্রচুর জায়গা আছে বাংলাদেশে। আমরা এর আগেও দেখেছি টাটা, স্যামসাং, অ্যাডিডাস বড় বড় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করে এসেছিলেনও দেখতে, কিন্তু আসার পর জমির সমস্যা, জটিল রেগুলেটরি মেকানিজম দেখে বিনিয়োগ না করেই তারা অন্যদেশে চলে গেছে। স্যামসাং ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করেছে। এখন দেশে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। একটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ছিলো সেটা কেটে গেছে। সেজন্য সৌদি আরব বড় অঙ্কের বিনিয়োগের আকাক্সক্ষা নিয়ে দেশে এসে আলোচনা করতে চাচ্ছে, এটা বাস্তবে পরিণত হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করা দরকার। সেখানে তারা কী ধরনের বিনিয়োগ করবে সেটার ওপর নির্ভর করবে। যদি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগ হয়ে থাকে তাহলে যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো আমরা তৈরি করছি সেখানে অগ্রগতি না হলে বিনিয়োগ বাস্তবে পরিণত হবে না। আবার অবকাঠামোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে সে অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করে তারা তার রিটার্নটা কীভাবে পাবে? এই সংক্রান্ত চুক্তিটা কী ধরনের চুক্তি হবে? কারণ বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তারা যদি পাওয়ার জেনারেশনে বিনিয়োগ করে তাহলে পাওয়ারটা কিনবে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সাথে কী দামে কিনবে সেটা কতোদিনের জন্য চুক্তিটা বলবৎ থাকবে, চুক্তিতে পরিবর্তন কোন অবস্থায় করবে এগুলোর ব্যাপার আছে। গ্যাস যদি হয় সেখানেও মিটিংটা একটা বড় ব্যাপার। এসব জটিলতাগুলোতে সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে তাদের সাথে, বিনিয়োগ হবে না। দু’পক্ষের স¦ার্থকে রক্ষা করতে না পারলে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগটা বাস্তবে পরিণত হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিনিয়োগটা যখন তারা করতে যাবে তখন সেটা বিনিয়োগ খাতের ওপর নির্ভর করবে। শিল্প খাতে বিনিয়োগ করতে করতে গেলে সরকারের সাথে খুব বেশি সমঝোতা করার প্রয়োজন পড়বে না। পরিবেশটা নিশ্চিত করতে পারলেই হবে। সঠিক সময়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলটা বুঝিয়ে দিতে পারলেই হবে। বাইরে হলে যদি জমি দেয়া যায় জমির সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাটা দিতে পারলেই হবে। তাহলে সে বিনিয়োগটা হবে সেখানে জটিলতা অনেক কম। কিন্তু জ¦ালানি ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে গেলে সরকারের সাথে অনেক সমঝোতার ব্যাপার আছে। যেগুলো উন্মুক্ত খাত না যেমন : বিদ্যুতে হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে সে বিদ্যুৎ কিনবে কে? সেখানে কী দামে কিনবে এ বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এজন্য যে উপাদান লাগে সেগুলো দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। এই বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে বিনিয়োগ বাস্তবে পরিণত হবে না। বিনিয়োগের চাহিদা আছে এবং আমরা চাই বিনিয়োগ আসুক কিন্তু এটা বাস্তবে পরিণত করতে চাইলে দু’পক্ষেরই প্রচুর কাজ করতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।