আমিরুল ইসলাম : অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, খেলাপিঋণ আদায়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাপিঋণ আদায়ের ব্যাপারে সরকার থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেগুলোকে চাপপ্রয়োগ করতে হবে।
এ প্রতিবদেকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, খেলাপিঋণ বাংলাদেশে একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে। পুনঃঅর্থায়ন বন্ধ করে দিলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশন বেঁধে দিলে, তারা যদি সেভাবে কাজ না করতে পারে তাহলে ম্যানেজিং বোর্ড বদলিয়ে দেয়া হবে। এমন পদক্ষেপ নিলে ঋণখেলাপি কমবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে কাজ করে তার মাধ্যমে খেলাপিঋণ আদায় হবে না । বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা ঋণ দিচ্ছে তাদেরকে বলা হোক ঋণ আদায় করে দিতে। কারণ ঋণ দেয়ার সময় কোনো অসুবিধা হয় না। তখন বলা হয় না কেউ ঋণ নিচ্ছেন না কিন্তু ঋণ আদায়ের সময় বলা হয় ঋণ পরিশোধ করছে না। এটা হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কালচার। আমরা দেখি যে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো ভালো চলছে, তাদের এতো ঋণখেলাপি নেই। তারা কীভাবে ব্যাংক চালাচ্ছে? শেয়ার হোল্ডারদের ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত ব্যাংক থেকে সরকারকে টাকা দেয়া হচ্ছে না। সরকার থেকে দুই-তিন হাজার কোটি টাকা লুট করা হচ্ছে। প্রতিবছর বলা হয় আমাদের ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের আরও টাকা দেন। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংগুলোর এতো ব্রাঞ্চ থাকার দরকার নেই। সারা পৃথিবীর ব্যাংকিং সিস্টেমে ব্রাঞ্চ কমানো হচ্ছে, আর আমাদের এখানে গত পাঁচ-সাত বছরে শুধু ব্রাঞ্চ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যতো বেশি ব্রাঞ্চ হচ্ছে ততো বেশি সমস্যা বাড়ছে। এগুলো দেখা উচিত। ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হলে তারা এসব ব্যাপারে পরামর্শ দেবে।
অধ্যাপক আবু আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকের বর্তমান যে অবস্থান খেলাপিঋণের ব্যাপারে, এই অবস্থানে খেলাপিঋণ আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। খেলাপিঋণ আদায়ের ব্যাপারে সরকারের ঢিলেঢালা ভাব রয়েছে। সরকার থেকে খেলাপিঋণ আদায়ের জন্য চাপ দেয়া না হলে তো খেলাপি ঋণ আদায় কমবেই। খেলাপিঋণ আদায় করতে পারেনি বলে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ? ঋণ দেয়ার সময় তো সহজেই দিয়ে দেয়া হচ্ছে জনগণের টাকা। একটা মাফিয়া গ্রুপ তারা পালন করছে ঋণ বিতরণের জন্য। ঋণ আদায় করা নয়, ঋণ বিতরণ করতেই তারা ভালোবাসে। কারণ বিতরণ করলে তারাও কিছুটা আর্থিকভাবে লাভবান হন। আদায় করলে তারা আর্থিক লাভ পান না। দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে এটাও একটা কারণ হতে পারে। অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে একটা শক্ত অবস্থান নেবেন এটা জাতি আশা করে। ঋণখেলাপিদের জায়গাজমি, বাড়িঘর সব বিক্রি করে দেয়া হোক। বড় ঋণখেলাপিদের ভালোভাবে ধরতে হবে। এর মধ্যে কিছু রাজনীতিবিদও আছেন। তাদেরকেও ছাড় দেয়া যাবে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।