অলক কুমার ও মতিউর রহমান : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় তিন বছর ধরে কারাগারে থাকা ভুল আসামি টাঙ্গাইলের জাহালম মুক্তি পেয়েছেন।
হাইকোর্টের আদেশের পর রোববার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হলে তার ভাই শাহনুরকে সঙ্গে নিয়ে রাতেই গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়াতে পৌঁছান জাহালম। রাতেই জাহালমকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তোলা হয়।
গতকাল সোমবার সকালে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়া গ্রামে জাহালমের বাড়িতে আনন্দের যেমন কমতি দেখা যায়নি তেমনি ছিল অন্যরকম এক আবেগঘন পরিবেশ। স্ত্রী আর একমাত্র কন্যা সন্তান ছাড়াও স্বজনরা জাহালমকে জড়িয়ে ধরে তাদের আবেগ আর আনন্দ প্রকাশ করে। এই জঘন্য ভুলের কঠোর বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে স্বজনরা।
জাহালমের ভাই শাহানুর বলেন, আমরা এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা যদি সঠিক ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।
ধুবুরিয়া গ্রামের বাবুল সরকার জানান, জাহালম খুবই সরল প্রকৃতির মানুষ। এই পরিবারটি খুবই নিরীহ। জাহালমের মা এক সময় অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছে।
জাহালম কারাগারে তিনবছরের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, সেখানে আমার খুবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। আমি কারাগারে সেবকের কাজ করতাম। একটু ভাল খাবারের জন্যে ওয়ার্ডের চল্লিশ জন আসামির খাবার সরবরাহ ও তাদের কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছু করতে হয়েছে আমাকে। বিনা অপরাধে জেল খাটছি এটা ভেবেই আমার বেশি কষ্ট হয়েছে। আমি যদি অপরাধী হতাম যদি এ ব্যাপারে কিছু জানতাম তাহলে এত কষ্ট হতো না। এ অবস্থার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুদকের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন জাহালম।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৩৩ মামলায় ভুল আসামি জেলে’ ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আবু সালেকের (মূল অপরাধী) বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।
ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোটের আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপনের পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান