ঐক্যের ডাক দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বললেন মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ করবোই
আসিফুজ্জামান পৃথিল, সান্দ্রা নন্দিনী : নিজের জেদ কোনভাবেই ছাড়তে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জাতিয় ঐক্যের জন্য সমঝোতায় রাজি। কিন্তু তা হতে হবে নিজের শর্তে। সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স, গার্ডিয়ান , নিউইয়র্ক টাইমস
স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন এই প্রত্যাশা ছিলো কোটিকোটি মার্কিনির। কিন্তু তাদের অনেকেই হতাশ হয়েছেন। তার এই বক্তব্যে ট্রাম্প নিজেকে বদলে ফেলার নূন্যতম ইঙ্গিত দেননি। তিনি আগে যা ছিলেন এই ভাষণ যেনো তারই প্রতিনিধিত্ব করেছে। তিনি তার প্রতিশ্রিæত সীমান্ত দেওয়ালের বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের আবারও একহাত নিয়েছেন। তার এই বজায় রাখা জেদ আরো একটি সরকারি অচলাবস্থারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সারা দেশের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প অবশ্য শুরুতেই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি আজ সন্ধ্যায় যেই এজেন্ডা উত্থাপন করবো, সেটি রিপাবলিকান এজেন্ডা নয়, ডেমোক্র্যাট এজেন্ডাও নয়। এটি আমেরিকার জনগনের এজেন্ডা।’ ট্রাম্প পুরো ভাষণ দিয়েছেন একজন দেশপ্রেমিকের সুরেই। কিন্তু এর মাত্র ২ ঘন্টা আগেই এক ব্যক্তিগত নৈশভোজে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমারকে ‘নোংরা’, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘গর্ধভ’ আর সিনেটর জন ম্যাককেইন এবং এলিজাবেথ ওয়ারেনকে ‘বেইমান আখ্যা দিয়েছিলেন।’ তার এই দ্বৈত আচরণের ফলে ২০১৯ সাল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্থিতিশীল হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্প বলেছেন, বর্তমানে অবৈধ অভিবাসন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে জরুরি ও জাতীয় সঙ্কট। আর তাই যতই বাধা আসুক সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণ করবোই। অবৈধ অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বাধা নেই বলে তিনি জানান। ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘অতীতে এই কক্ষেই বেশিরভাগ মানুষ দেওয়াল নির্মাণের পক্ষে ভোট দিলেও, নিরাপত্তা দেওয়াল বলতে যা বোঝায় সেরকম কিছু এখনও নির্মিত হয়নি। আর আমি সেটিই নির্মাণ করে দেখাবো।’ কংগ্রেসের নতুন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ঠিক ট্রাম্পের পেছনেই কঠিন মুখে বসে মাথা নাড়ছিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচারিত এ ভাষণে ট্রাম্প পশ্চিম সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করার সুযোগ পান। কেননা, ডেমোক্রেটরা ক্রমাগত বলে চলেছেন, সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণে ট্রাম্প যে অর্থ দাবি করছেন সেটি অনৈতিক, অকার্যকর ও অর্থের চরম অপচয় ছাড়া আর কিছুই না।ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, তার সময়ে পূর্বে যে কোনও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও অনেকবেশি আইনগত, আধুনিক ও নিরাপদ করার কোনও বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এমন একটি অভিবাসন পদ্ধতি প্রচলন করা যার মধ্যদিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জীবন ও চাকরি সুরক্ষিত করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ধনী রাজনীতিক ও অনুদানদাতারা খোলা সীমান্তের পক্ষে মত দিয়ে চলেছেন। তবে, মজার বিষয় হলো তারা নিজেরা কিন্তু নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুউচ্চ সুরক্ষিত দেওয়াল, ভারী দরজা ও গার্ড নিয়োগ করেছেন!’
ভাষণে তার ব্যক্তিগত আর্থিক হিসাব ও তার প্রশাসনের বিভিন্ন ইস্যুতে চলমান দ্বিপাক্ষিক তদন্ত নিয়ে হাউজ ডেমোক্র্যাটদের কঠোর সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তার ভাষ্যমতে, বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।ট্রাম্প বলেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে একটি অর্থনৈতিক মিরাক্যাল ঘটে চলেছে। আমাদের এই যুগান্তকারী সাফল্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যনীতি পরিবর্তনের মাধ্যমেই এসেছে। আর অন্যদিকে, আমরা নির্বোধের মত যুদ্ধ বাধিয়ে রেখে, নোংরা রাজনীতি করে অথবা হাস্যকর সব দ্বিপাক্ষিক তদন্ত চালিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি রোধ করছি।’ আবার, ইরানকে বিশে^র অন্যতম একটি হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি রাষ্ট্র থেকে দৃষ্টি সরাতে পারি না যে দেশটি সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস চেয়ে আসছে এবং যারা ইহুদি জনগণের জন্য মারাত্মক হুমকি।’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি ২৭ ও ২৮ ফেব্রæয়ারি ভিয়েতনামে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন।