শ্রমিক আন্দোলনের কারণে এইচঅ্যান্ডএম এর সরবরাহকারী বাংলাদেশি গার্মেন্টস ছাটাই করেছে হাজারো কর্মী
আসিফুজ্জামান পৃথিল : ইউরোপিয় ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম এবং নেক্সট এর মতো কোম্পানিতে পণ্য সরবারহকারী কমপক্ষে ৩টি বাংলাদেশি তৈরী পোষাক কারখানা হাজারো কর্মীকে ছাটাই করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। ইউনিয়ন নেতারা অভিযোগ করেছেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্যই তাদের ছাটাই করা হয়েছে। রয়টার্স
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ এবং শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের কয়েকদিন পরই এই ছাটাই করা হরেয়ছে। জানুয়ারি মাসের এই সংঘর্ষের পর সরকার এতে হস্তক্ষেপে বাধ্য হয় এবং শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি করা হয়। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কারস ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের প্রধান কাজি রুহুল আমিন রয়টার্সকে বলেন, ‘যে সব শ্রমিক নিজেদের নায্য মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন, শ্লোগান দিয়েছেন, যারা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা তাদের চাকরি হারাতে শুরু করেছেন।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রধান এরপর পৃষ্ঠা ৭, সারি
(শেষ পৃষ্ঠার পর) বাবুল আখতার জানিয়েছেন, ২৭টি কারখানার কমপক্ষে ৭ হাজার ৫৮০জন কর্মীকে সাম্প্রতিক সময়ে ছাটাই করা হয়েছে।
গার্মেন্টস উৎপাদক ও রপ্তানীকারকদের সংগঠন বিজেএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান রয়টার্সকে বলেছেন যে সকল শ্রমিক আন্দোলনের নামে ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ধ্বংস্বাত্মক কাজে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয় হচ্ছে। বেশ কিছু শ্রমিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরেও তারা চাকরি হারাচ্ছেন, কারণ তারা শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করেছেন। নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেছেন, ‘যখন আমি ছাটাই তালিকার সবার উপরে আমার নাম দেখি, খুব অবাক হয়েছিলাম। বিক্ষোভ চলাকালে আমি প্রতিদিন কাজে এসেছি। আমি কখনই কোন বেআইনি কাজ করেছি। আমরা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলাম বলেই তালিকায় আমার ও আমার সহকর্মীদের নাম উঠেছে।’ এই বিষয়ে বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এর এক জেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শ্রমিক নেতারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ৩ বড় উৎপাদক ক্রোনি গ্রæপ, ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডায়িং মিলস তাদের কর্মী ছাটাই করেছে। এই তৈরী পোষাক নির্মাতারা সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএম এবং যুক্তরাজ্যের নেক্সটকে পোষাক সরবরহ করেন। ক্রোনি এবং মেট্রোকে মত দেওয়ার জন্য পায়নি রয়টার্স। ইস্ট ওয়েস্ট এর প্রধান প্রশাসক আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ৭ জানুয়ারি কিছু শ্রমিক কারখানায় হামলা চালায় এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে। এই ঘটনার পর তাতের সাড়ে ৬ হাজার কর্মী থেকে ৮ শতাধিককে ছাটাই করা হয়েছে। কোম্পানিটির কর্মী ছাটাই এর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইস্ট ওয়েস্ট গ্রæপের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, তার কোম্পানি বেআইনি আ অনৈতিক কিছু করে না। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, আমরা যদি এমন করি, ক্রেতারা বিষয়টি হালকাভাবে নেবেন না।’
বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ব্রিটিশ ব্র্যান্ড নেক্সট এক ইমেইল এর মাধ্যমে রয়টার্সকে বলেছে, ‘নেক্সট পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত রয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত কোম্পানির অডিট কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন। এইচ অ্যান্ড এম বলেছে, ‘সংগঠনের অধিকার একটি প্রশ্নহীন মানবাধিকার। আমরা বাংলাদেশের বস্ত্রখাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত রয়েছি।’ ম্যাঙ্গো এর মতো ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ড এবং গুস ও সেন্ক্স এর মতো মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো এই ছাটাই এর বিষয়ে মন্তব্য করেনি। জারার মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশ থেকে পোষাক কেনে না। সম্পাদনা : ইকবাল খান