কোচিং বাণিজ্য নিয়ে সরকারের নীতিমালা বৈধ ঘোষণা রাঘব বোয়ালদের ছেড়ে দুর্বলদের নিয়ে ব্যস্ত দুদক, বললেন হাইকোর্ট
নূর মোহাম্মদ : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বড় বড় রাঘব বোয়ালদের ধরে এনে ছেড়ে দিয়ে দুর্বলদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কাস্টমস হাউজ, ব্যাংক, বন্দর, ভূমি অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে ছোটো পরিসরে তদন্ত বা অনুসন্ধানে সুযোগ নেই দুদকের। এসব খাতে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে এ ধরনের অভিযোগের দিকে নজর দিতে হবে। কোচিং বাণিজ্য নিয়ে এক মামলার রায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এমন পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে করা সরকারের নীতিমালা বৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, যেখানে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। ছোট দুর্নীতির আগে বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তবেই দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে। কোচিং বাণিজ্য অনুসন্ধান এবং তদন্ত করার এখতিয়ার দুদকের আছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি অগ্রধিকার তালিকা থাকতে হবে, কোন বিষয়ে কমিশন তদন্ত বা অনুসন্ধান করবে।
এর আগে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। পরে ওইসব নোটিশ এবং কোচিং নিয়ে সরকারের করা নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে ওই শিক্ষকেরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। সে সময় শুনানি করে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। রুলের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দেন হাইকোর্ট।
এ রায়ের ফলে সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে করা সরকারের নীতিমালা কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
২০১২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই নীতিমালায় বলা হয়, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা জানাতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়, অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মহনগরী এলাকার প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে তিনশ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুশ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড়শ টাকা নেয়া যাবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান