ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত নীতিমালা প্রয়োজন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
হ্যাপি আক্তার : তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহার। পরিবেশ দূষণ আর স্বাস্থ্যঝুঁকির নতুন দুর্ভাবনা, ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য। গত ১০ বছরে দেশে এই আবর্জনার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ ই-বর্জ্যরে কারণে পরিবেশে লেড, মারকারির মতো ক্ষতিকর ভারি ধাতুর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪ দশমিক ছয় দুই মিলিয়ন টন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি এড়াতে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত নীতিমালা প্রয়োজন। চ্যানেল ২৪।
আয়ুসীমা পার কিংবা বিকল হলে ইলেকট্রনিক পণ্য পরিণত হয় আবর্জনায়। বিশ্বজুড়ে যা পরিচিত ই-বর্জ্য নামে। এই ই-বর্জ্য এখন সারা বিশ্বের মতো দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশেও। বুয়েটের এক গবেষণার তথ্য বলছে, ২০১০ সালে দেশে ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টন। গেল ৮ বছরে যা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ টনে। এসব বর্জ্য থেকে সিসা, পারদ, লেড অক্সাইড ও টক্সিক গ্যাস নির্গত হয়। মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য যা মারাত্মক ক্ষতিকর।
বুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রওশন মমতাজ বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে কর্মীরা আছেন, তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থেকে যায়। তাদের শরীরে ক্ষতিকারক পদার্থ ধীরে ধীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হবে। ই-বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াকারীদের মতে, এ ধরনের বর্জ্য সংগ্রহ করাটায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ঝুঁকির মাত্রাও বেশি।
আজিজু রিসাইক্লিং অ্যান্ড ই-ওয়েস্ট কোম্পানি লি. এর মহাব্যবস্থাপক এ. বি. সিদ্দিক সেলিম মিয়া বলেছেন, ফেরিওয়ালা, টোকাই, কন্টাকটার এবং বড় বড় লট আকারে আমাদের কারখানায় নিয়ে আসে। তবে নীতিমালা হলে সবকিছু নিয়ম কানুনের মধ্যে আসবে। নীতিমালার মাধ্যমে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ-কর্ম হবে, আমরাও সুশৃংঙ্খলভাবে কাজ করতে পারবো।
শিগগিরই এ বিষয়ে নীতিমালা করার আশ্বাস পরিবেশ অধিদপ্তরের। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তৎপর থাকার দাবি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেছেন, বিটিআরসি এখন কোনো লাইসেন্স দিচ্ছে না। তার মানে বিটিআরসি শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের মনিটরিং এর দল রয়েছে, কিভাবে কাজ করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. সুলতান আহমেদ বলেছেন, সম্পূর্ণ আইনের আওতায় এসে এই নীতিমালাটি করতে যাচ্ছি। একটি নীতিমালা করার জন্য সরকারি যে নিয়ম কানুন রয়েছে যেগুলো চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে তা জমা দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ই-বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার থেকে পুনঃপ্রক্রিয়া পর্যন্ত সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণের যে কতগুলো কারণ রয়েছে তার অন্যতাম ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থা না থাকা। দ্রুত নীতিমালা করার পাশাপাশি কার্যকর বাস্তবায়ন করা গেলে পরিবেশ দূষণের অন্তত একটি কারণ থেকে মুক্ত পারে বাংলাদেশ। সম্পাদনা : রাজু