প্রধানমন্ত্রী বললেন, জনগণের অর্থ সাশ্রয় ও কৃষি জমি রক্ষায় উপজেলাগুলোতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
বাশার নূরু : যত্রতত্র ভবন, রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ রোধ এবং কৃষি জমি রক্ষার লক্ষ্যে সকল উপজেলা সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সময়বায় মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের অর্থ সাশ্রয় ও কৃষি জমি রক্ষায় উপজেলাগুলোতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং রাস্তা ও চলাচলের পরিকল্পিত হতে হবে। গতকাল সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাস্টার প্ল্যানের লে-আউটে আবাসন, হাসপাতাল, মার্কেট, স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, কৃষি-খামার, শিল্প কারখানা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। আমরা যদি যথাযথভাবে এটি করতে পারি, তাহলে জনগণ এটি গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, এখন কারও টাকা থাকলেই ধানি জমি নষ্ট করে দালান তুলছে। কোনো হিসেব-নিকেশ নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে যে, যেখান থেকে দাবি করছে সেখানে রাস্তা হচ্ছে। সেটা না করে আমরা যদি এটা পরিকল্পিতভাবে করতে পারি, তবে বেশি মানুষ এটার সুবিধা পাবে। যেহেতু প্রচুর রাস্তা হয়ে গেছে আমাদের কিছু করার নেই, সবচেয়ে মুশকিল হচ্ছে রাস্তাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য বলেছি, আমরা যদি তৃণমূল পর্যায়ে একটা মাস্টার প্ল্যান করে দেই তবে এখনও যেটুকু সময় আছে আমরা অনেক দ্রুত উন্নত করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয়বারের মতো এসে এটুকু সান্তনা পেলাম যে আমরা কিছু কাজ করার সুযোগ পেলাম। তাই বাজেট প্রণয়নের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা মানুষের কাছে কীভাবে পৌঁছাতে পারি। আগামীতেও কেন্দ্রীয়ভাবে বাজেট প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু এরপর আমি চাচ্ছি যে দায়িত্ব দিয়ে দেব আমাদের প্রতিটি জেলায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা, যাতে তারা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারে ও অবদান রাখতে পারে। বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া উন্নয়নও টেকসই হবে না। যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে বারবার ক্ষমতায় এসেছিল তাদের মধ্যে দেশগড়ার চেতনটাই ছিল না। এর ফলে দেশটা অনেক পিছিয়ে ছিল বলতে গেলে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে গেলে আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা নিতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। সেখানে যে মানুষগুলো বাস করে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা, তাদের জীবন মান উন্নত করা। এটা করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই আস্তে আস্তে সমস্ত দেশটাই উন্নত হবে। সেদিকে লক্ষ্য করে এই মন্ত্রণালয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বাজেটের সবচেয়ে বড় টাকার অংশটাই এই মন্ত্রণালয়ে আসে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো কাজ রয়ে গেছে যেগুলো আমাদের করতে হবে। আমি সব সময় চিন্তা করেছি কীভাবে মানুষের কাছে যাওয়া যায় মানুষের কাজটা করা যায়। এই মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে সুপেয় পানির নিশ্চয়তা দেয়া। স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে সঙ্গে আবার রাস্তাগুলোকেও উন্নত করতে হয়। বহুমুখী কাজ, আবার জনস্বাস্থ্যের দিকেও গুরুত্ব দেয়া। আমি মনে করি যতগুলো মন্ত্রণালয় আছে এই মন্ত্রণালয়টা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।
সকাল ১০টার দিকে সচিবালয়ে আসলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এসময় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, স্থানীয় সরকার সচিব এস এম গোলাম ফারুক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব মো. কামাল উদ্দিন তালুকদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান