বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দখলে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে কমছে পত্রিকার প্রকাশনা
আসিফুজ্জামান পৃথিল : ২০১৯ সালের শুরুটা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য মোটেও ভালো হয়নি। শুধুমাত্র ১টি মাস গেলেও বছরটা যে দুর্বিসহ হতে যাচ্ছে তা অনেক গণমাধ্যমকর্মীই বুঝতে পারছেন। শুধুমাত্র চকচকে মাস্টহেড দেখে ছাপা হওয়া পত্রিকার অবস্থা বোঝার সাধ্য কারো নেই। আশঙ্কাজনক হারে বিজ্ঞাপন কমে গেছে বিশ্বের অধিকাংশ ছাপা হওয়া প্রকাশনার। মিডিয়া অনলাইন
২০১৮ সালের প্রথম মাসে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি হারিয়েছেন ২১০০ গণমাধ্যম কর্মী। অনেকে আগে থেকেই বলছেন প্রিন্ট মিডিয়া মৃত। কিন্তু এবার প্রভাব পড়েছে বড় বড় অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতেও। ইন্টারনেট সেনসেশন বাজফেড তাদের কর্মীবাহিনীর ২৫ শতাংশ ছাটাই করেছে। ২০০ মানুষ চাকরি হারিয়ে এখন বেকার। গণমাধ্যমটির সিইও জেনাহ পেরেতি বলেছেন, তাদের কোম্পানি কম লোকবল নিয়ে কাজ করতে এক ধরণের বাধ্য হয়েছে। কারণ তাদের আয় কমে গিয়েছে। একই ধরণের কথা প্রতিধনিত হয়েছে টেলিভিশন ভাইস মিডিয়ার কণ্ঠেও। তারা পহেলা ফেব্রুয়ারি তাদের ১০ শতাংশ কর্মী ছাটাই করেছে। হাফিংটন পোস্ট এবং ইয়াহুর মালিকানা প্রতিষ্ঠান ভেরিজন এর এক মুখপাত্র ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের ৮০০ কর্মীকে চলে যেতে হবে। এই ৮০০ কর্মীর মধ্যে রয়েছেন পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া জেসন টার্কিস। তিনি স্বীকার করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মেধাবী মানুষদের প্রয়োজন। কিন্তু অর্থের অভাবে তারা তা পারছেন না।
যদি প্রিন্ট মিডিয়া মৃত হয়ে থাকে, তবে বড় বড় অনলাইন মিডিয়াগুলো মৃতপ্রায়। ১০ বছর পর এই গণমাধ্যমগুলো থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একসময় বিজ্ঞাপন দাতারা অনলাইন গণমাধ্যমের দিকে ঝুঁকলেও তারা এখন ঝুঁকছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দিকে। কারণ এগুলোতে তরুণরা বিশাল সময় কাটায়। সবচেয়ে বড় কথা এগুলো অতিরিক্ত সস্তা।
তবে সবচেয়ে বড় কথা সংবাদের ভোক্তা কিন্তু একেবারেই কমেনি। তারা এখন ঝুঁকে পড়েছেন তথাকথিত কমিউনিটি জার্নলিজমের দিকে। এই সস্তা এবং কম বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমই এখন মানুষ পছন্দ করছেন। মূলধারার গণমাধ্যম না হয়েও এগুলো মূলধারার চাইতে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু এগুলো কোনভাবেই মূলধারার গণমাধ্যমের বিকল্প হকে পারে না। ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম পোস্ট আর যাই হোক সংবাদ উৎস হতে পারে না। পিইডাব্লিউ রিসার্চ সেন্টারের পপ্রকাষিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬৮ শতাংশ আমেরিকান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেই প্রয়োজনীয় সংবাদ আশা করেন। ৫৭ শতাংশ পাঠক জানেন এই সংবাদগুলো সঠিক নয়। আর রিপাবলিকান ভোটারদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৭২ শতাংশ। এরপরেও তারা এগুলো থেকেই সংবাদ পড়তে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।