চতুর্থ প্রজন্মের সি৪ ধানে ফলন হবে দ্বিগুণ, অর্ধেকে নামবে সার ও পানির ব্যবহার
মতিনুজ্জামান মিটু : বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ এশিয়া অঞ্চলে বসবাস করে, যেখানে বর্তমানে ধান উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি হেক্টর জমি ২৭ জন মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করে। ২০৫০ সালের মধ্যে একই জমি থেকে কমপক্ষে ৪৩ জন মানুষকে খাদ্য যোগান দিতে হবে। অথচ শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে আবাদি জমি কমছে ক্রমাগত। ভবিষ্যতে বিশ্বের জনসংখ্যার ৭৫ ভাগ শহরে বসবাস করবে। তাদের জন্য অবিরত খাদ্য সরবরাহ বজায় রাখা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই প্রেক্ষাপটে ধানের বর্তমান ফলন সীমা অতিক্রম করার জন্য সি৩ রাইসকে সি৪ রাইসে রূপান্তর করা ধান বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ধান বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালকের দপ্তরের সিনিয়র লিয়াজো অফিসার পরিচালক কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন জানালেন, ইরিতে কর্মরত উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ববিদ ড. জন সিহির ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম সি৪ ধান উদ্ভাবনের প্রস্তাবটি করেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন সি৪ ধান গবেষণায় ১১.১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিলে ২০০৮ সালে প্রকৃত গবেষণার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সি৪ ধান প্রকল্পটি তৃতীয় পর্যায়ে (২০১৫-২০১৯) আছে এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জেন ল্যাংডেল এই গবেষণার সমন্বয় করছেন।
এই প্রকল্পে আটটি দেশের ১২টি প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ১৮টি রিসার্চ গ্রুপের বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত গবেষণার অগ্রগতি হচ্ছে ধানের পাতায় একটি জিন প্রবেশ করানো সম্ভব হয়েছে। ফলে প্রোটো-ক্রাঞ্জ এনাটমি পাওয়া গেছে। যা সি৩ ধান হতে সি৪ রাইসে রূপান্তরের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। ২০৩৫ সালের মধ্যে এশিয়ার ১৩টি দেশে ট্রান্সজেনিক সি৪ রাইস ছাড়করণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। এর জন্য গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য ১০৬ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার এবং ছাড়করণ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকা-ের জন্য ১৮.৮ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার প্রয়োজন হবে।
সি৪ ধানের সুবিধা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে কৃষিবিদ মোমিন তার ধান, ‘ধ্যান ও বিবিধ বিজ্ঞান’ বিষয়ক গ্রন্থে জানান, সি৪ সালোকসংশ্লেষণ প্রযুক্তি সি-৩ ধানে প্রতিস্থাপন বা সংযোজন করা গেলে ধানের উৎপাদন দ্বিগুণ বাড়বে। তাছাড়া দিনের অপেক্ষাকৃত গরম অংশে ধানের পাতার পত্ররন্ধ্র আশিংক বন্ধ থাকার ফলে পানির অপচয় কম হবে। ধানের পানির ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে গম, ভুট্টা, আখের মতো ধান চাষে সেচ চাহিদা বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসবে এবং প্রতি একক পানি অপচয়ের বিপরীতে বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই অ´াইড ফিক্সেশন হবে। ধান চাষে সারের ব্যবহার বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসবে। সি৪ রাইসের নাইট্রোজেন ব্যবহারের দক্ষতা ৩০ ভাগ বেশি হবে। কারণ শর্করায় কার্বন ডাই অক্সাইড ফিক্সেশন হবে। ফিক্সেশনকারী এনজাইমের প্রয়োজনীতা কমবে। এসব কারণে বর্তমান ধানের তুলনায় সি৪ ধানের ফলন বেড়ে যাবে। এটি ব্যতিত অন্য কোনো বিবর্তনমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধানে এই ধরনের ইতিবাচক রূপান্তর ও উন্নয়ন সম্ভব নয়। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান