কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্যোক্তা উন্নয়ন
আবু তাহের খান : সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রসঙ্গের মধ্যে শিক্ষিত তরুণের চাকরি না পাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে অন্যতম। বলা হচ্ছে, শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বিরাজমান ব্যাপকভিত্তিক এই বেকারত্ব তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়াচ্ছে, যা প্রকারান্তরে বড় মাত্রার জাতীয় ক্ষতিরই নামান্তর। বস্তুত দেশের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি সবকিছুর উপরই এটি একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। আর সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে সর্বসম্প্রতি দায়িত্ব নেয়া নতুন সরকারের সামনে দেশের সব শিক্ষিত তরুণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ বৈকি! আর সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার ও দেশের বেসরকারি খাত কী করতে পারে, সে ষিয়টি নিয়েই এখানে সংক্ষেপে খানিকটা আলোকপাত করা হলো।
প্রথম সরল হিসাব হচ্ছে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে সর্বাগ্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে—তা সেটি স্থানীয় বা বৈদেশিক বিনিয়োগ যাইহোক না কেন। দ্বিতীয়ত: এ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেবাখাতের তুলনায় উৎপাদনখাতকে (ম্যানুফ্যাকচারিং) বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। অবশ্য তার মানে এই নয় যে, সেবাখাতে বিনিয়োগ হবে না। বিনিয়োগ সেবাখাতেও হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সেবাখাতের বিনিয়োগ যেন সেসব ক্ষেত্রে হয়, যেসব ক্ষেত্রে হলে পরে তা উৎপাদনখাতের বিনিয়োগকে সহায়তা ও সম্পূরকতা দান করতে পারে। আর বৈদেশিক বিনিয়োগ শুধু মোবাইল ফোনের মতো মুনাফা স্থানান্তরকারী খাতে নয়—স্থানীয় অর্থনীতির ভিত্তি নির্মাণে সহায়ক অন্যান্য খাতেও নিশ্চিত করতে হবে। যাহোক, বিনিয়োগের এ ধারণাগত বিষয়গুলোকে মূল বিবেচনায় রেখে বর্ধিত কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপায় ও কৌশল নিয়ে এখন খানিকটা আলোচনা করা যেতে পারে।
এটি এখন জনপ্রিয় আলোচনায় পরিণত হয়েছে যে, কৃষিতে নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আর কোনো সুযোগ নেই, বরং এ খাত এখন ছদ্মবেকারত্বের ভারে জর্জরিত। ধারণাটি সর্বাংশে সত্য নয়, বরং তা একপেশে ও অসম্পূর্ণ। সত্য এই যে, এখানে ছদ্মবেকারত্ব রয়েছে বটে, কিন্তু পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগও যথেষ্টই রয়েছে। স্পষ্ট করলে বিষয়টি দাঁড়ায় এই যে, প্রচলিত ধাঁচের কৃষিকাজে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তেমন একটা না থাকলেও প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক কৃষিতে নতুন বিনিয়োগ ও এর বহুমুখীকরণের সুযোগ এতোটাই রয়েছে যে, এ খাতই হয়ে ওঠতে পারে শিক্ষিত তরুণের নিকট ভবিষ্যতে বেকারত্ব লাঘবের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র। তবে সে আলোচনায় যাওয়ার আগে শিক্ষিত তরুণ চাকরি না খুঁজে কেন ও কিভাবে উদ্যোক্তা হবে, সে নিয়ে মূল আলোচনাটি সেরে নেয়া যেতে পারে।
মধ্যযুগের গোড়াতে পশুপালন ছিল অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। কিন্তু পেশার অগ্রাধিকার তালিকায় পশুপালন নিশ্চয় এখন আর টিকে নেই। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পেশা পছন্দের ক্রমও পাল্টে গেছে। পরিবর্তনের ধারায় আজকের এ যুগে এসে মানুষ চাকরিকেই সর্বাধিক ঝুঁকিবিহীন ও নিরাপদ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, যদিচ প্রগতিশীলদের অনেকেই এরসাথে মুৎসুদ্দি মানসিকতার ছায়া রয়েছে মনে করেন। তবে সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই এটা ঠিক যে, চাকরির মতো পেশায় মানুষের ভেতরকার উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতার মতো বৈশিষ্টগুলো অনেকটাই সংকোচিত হয়ে পড়ে। কিন্তু তারপরও অনুদ্দমী মানুষ, সংখ্যায় যারা সমাজের সিংহভাগ, চাকরিকেই জীবনের পরম আরাধ্য বলে গণ্য করেন। তবে আজকের এ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে এসে শিক্ষিত তরুণদের জন্য উপলব্ধি করবার সময় হয়েছে যে, নিজেদের মেধা ও সৃজনশীল চিন্তাভাবনার যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে চাইলে গবেষক ও বিজ্ঞানীর কর্মকান্ডের পর এখন প্রথম ক্ষেত্রটিই হচ্ছে উদ্যোক্তাবৃত্তি এবং কোনোভাবেই তা চাকরি নয়।
অবশ্য এটি শুধু পরামর্শের আদলে মুখে বললেই তরুণরা সেদিকে ধাবিত হবে—এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। এ ধারণার বাস্তবায়ন দেখতে চাইলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন হবে উদ্যোক্ত-অনুকূল একটি বাস্তব পরিস্থিতি তৈরি করা, যেটি একজন শিক্ষিত তরুণকে চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিশ্ব উদ্যোক্তা উন্নয়ন সূচক ২০১৮ অনুযায়ী বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৪তম, যেখানে সার্কভুক্ত ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের অবস্থান হচ্ছে যথাক্রমে ৬৮, ৯০ ও ১২০তম। এ অবস্থার আশু পরিবর্তন করতে না পারলে আমরা মুখে তাদেরকে যতোই উদ্যোক্তা হবার পরামর্শ দিই না কেন, বাস্তব পরিস্থিতি তাকে মোটেও সেদিকে ধাবিত হতে সহায়তা করবে না।
এ অবস্থার পরিবর্তনে তাহলে কী করা যায়? এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার সারির কাজগুলোর মধ্যে একেবারে প্রথমেই রয়েছে, উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করার জন্য কী ধর?ের প্রস্তুতি প্রয়োজন, সে বিষয়ক ধারণা ও তথ্যাদি সংশ্লিষ্টদের নাগালের মধ্যে সহজলভ্য করে তোলা। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা ধর?ের ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। তবে বাজার ও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীলতার এ যুগে এ জন্য কোনো অবস্থাতেই ব্যয়বহুল স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ ও স্থায়ী লোকবল নিয়ো? করাটা সমীচীনহবে?, যেমনটি এতদিন পর্যন্ত হয়ে আসছিল। কারণ আজ যে পণ্য ও প্রযুক্তির চাহিদা রয়েছে, অবধারিতভাবেই দশ বছর পর সে চাহিদা আর অক্ষুণœ থাকবে না। অতএব কাজগুলো করতে হবে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে এবং চুক্তিভিত্তিক লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সারাদেশে বর্তমানে যেসব কারিগরি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আজকের পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেগুলোর ভৌত অবকাঠামো ব্যতীত বাদবাকি দক্ষতা ও সামর্থের উপর খুব বেশি নির্ভর না করাটাই শ্রেয়তর হবেবলে মনে করি। কারণ এসব দক্ষতা ও সামর্থের স্তর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সর্বশেষ বাজারচাহিদার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ, সমন্বয় অনুপযোগী ও পশ্চাৎপদ। এ অবস্থায় এসবের সমন্বয় ও আধুনিকায়নের জন্য অহেতুক সময়, শ্রম ও আর্থিক সম্পদ ব্যয় না করে সরকারের উচিৎ হবে সর্বশেষ বাজারপ্রবণতার (শুধু স্থানীয় বাজার নয়—বিশ্ববাজারও) প্রতি লক্ষ্য রেখে ‘যেখানে যেরূপ প্রয়োজন’ নীতিমালার আলোকে এসব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকেও সমভাবে ও ব্যাপক পরিসরে যুক্ত করা যেতে পারে; এবং তা করার একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (এসএমই) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণদানের যে নীতিমালা রয়েছে, তার ভেতরে উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ঋণদানের জন্য একটি অধিকতর অগ্রাধিকারক্রম নির্ধারণ করা। আর পাশাপাশি থাকতে পারে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংক্রান্ত শিক্ষাদান কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা।
অগ্রা?িকার সারির দ্বিতীয় কাজটি হতে পারে, বাজারচাহিদা ও সম্ভাব্য উদ্যোক্তার নিজস্ব যোগ্যতা ও সামর্থের আলোকে কোথায়বিনিয়োগ অধিকতর নিরাপদ ও লাভজনক হতে পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও তথ্য-নির্দেশনা লাভের সুযোগ আগ্রহী সম্ভাব্য উদ্যোক্তার জন্য নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে বলি: উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংক্রান্ত সেবাসহায়তাদানের সাথে জড়িত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই এ ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সামর্থের ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনিয়মতান্ত্রিক ঋণদানের বাইরে পেশাগত স্বচ্ছতা রক্ষা করে যে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয়া হয়, সেখানেও-যে বহু বিনিয়োগ প্রকল্প অসফল হচ্ছে, তার একটি বড় কারণ হচ্ছে লাভজনক ও নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র যাচাইয়ে যথার্থ দূরদৃষ্টির অভাব ও পেশাগত দক্ষতার ঘাটতি। ফলে যে শিক্ষিত তরুণদেরকে এখানে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে, তাদেরকে যদি উপযুক্ত বিনিয়োগক্ষেত্র নির্ধারণে নির্দেশনামূলক (রহফরপধঃরাব)তথ্য দিয়ে সতায়তা করা না যায়, তাহলে ব্যাংকের অনিচ্ছাকৃত খেলাপি উদ্যোক্তার মতো এদেরও কারো কারোর মাঝপথে হতাশ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখানে স্পষ্টীকরণের জন্য বলি: বিনিয়োগক্ষেত্র নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাকেই নিতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যে ধরনের তথ্য ও পরামর্শ প্রয়োজন, তা যাতে রাষ্ট্রের উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংক্রান্ত কর্মকাঠামোতে যথাযথভাবে সন্নিবেশিত থাকে, সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
এবার প্রবন্ধের গোড়াতে উত্থাপিত কৃষিতে নতুন করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে কিনা, সে আলোচনায় ফিরে যাই। তথ্যভিত্তিক দৃঢ় অভিমত হচ্ছে এই যে, শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশের জন্যই এই মুহূর্তের সবচেয়ে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগ অনুসন্ধানের একেবারে প্রথম ক্ষেত্রটি হচ্ছে কৃষি, যে খাত সম্পর্কে সামাজিক ও উত্তরাধির সূত্রে তাদের প্রায় সবারই কমবেশি কিছুটা ধারণা রয়েছে। তবে এ বিনিয়োগ হতে হবে আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষিতে, যেখানে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন বহুমুখীকরণ (ফরাবৎংরভরপধঃরড়হ) থাকবে, তেমনি বহুমুখীকরণ থাকবে কৃষিপ্রক্রিয়াজাতকরণেও। এবং সে প্রক্রিয়াজতকরণ শুধু বহুমুখীকরণের উদ্দেশ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, একইসঙ্গে তার লক্ষ্যেও পরিধিতে যুক্ত হবে বিশ্ববাজারও। আর তেমনটি ঘটলে বাংলাদেশ শুধু শাকসব্জি, ফলমূল, মিঠাপানির মাছ ইত্যাদির উৎপাদনেই বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ হয়ে থাকবে না—এসবের প্রক্রিয়াজাতকরণেও শীর্ষকাতারের রফতানিকারক দেশ হয়ে ওঠবে বলে আশা করা যায়। আর যেসব উৎপাদনসূচকের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎবাণীতে বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যতের অর্থনীতিকে বড় অর্থনীতির কাতারে ফেলা হচ্ছে, তারমধ্যে কৃষিখাতে (মৎস ও পশুপালনসহ) প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি ওফসলের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি এই প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়টিও রয়েছে। আশা করবো, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত তরুণেরা সে ভবিষ্যৎবাণীকে বাস্তবে রূপদানের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
নতুন সরকার প্রতিটি গ্রামে সকল নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির অঙ্গীকার করেছে। সে অঙ্গীকারের পুরোটা না হোক, ৮০ শতাংশও যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে পল্লী অবকাঠামোখাতে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, শিক্ষিত তরুণেরা সেটিকে ব্যবহার করে চৌকষ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সুযোগ পাবেন বলে আশা করা যায়। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারও সেটাকেই অন্যতম কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে বেকারত্ব মোকাবেলার চ্যালেঞ্জকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারে বৈকি! তবে এ ক্ষেত্রে একটাই বিনীত প্রস্তাব: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে হবে; এবং এরাই পল্লী অঞ্চলে শিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল তরুণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নেতৃত্বদানে সক্ষম হবে। আর তা করতে হলে মাননীয় সংসদ সদস্যগণকেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তাদের স্থানীয় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জাতীয় সংসদের প্রকৃত কার্যক্রমের প্রতি আরো মনোযোগী হতে হবে, যেখানে বসে তাঁরা আরো আধুনিক ও গতিশীল এমনসব আইন ও আইনী সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করবেন, যা দেশের উদ্যোক্তা উন্নয়ন কার্যক্রমকে বর্ধিত গতিশীলতাদানে সক্ষম হবে।
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিঃসন্দেহে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশতার কারণে শ্রমঘন অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকা-েই ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তিঘন ও শ্রমলাঘবকারী কর্মকানেন্ড রূপান্তরিত হবে, তখন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সে চ্যালেঞ্জ আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে বৈকি! তদুরপরি দেশ ও পৃথিবী থেকে বহু পেশা ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তমানতার দিকে ধাবিত হবার ফলে কর্মসংস্থান হ্রাসের ঝুঁকিতো রয়েছেই। তারপরও আশার কথা যে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ও ভোগবিলাসের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান বৈচিত্রের কারণে পৃথিবীতে প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন নতুন কর্মকান্ড সৃষ্টি হচ্ছে ও হবে, যে সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তরুণদেরই বেশি রয়েছে। অতএব সরকারের উদ্যোক্তা উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় বর্ধিত তৎপরতা (যা নেয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী), গ্রামে নাগরিক অবকাঠামো সৃষ্টি ও বিশ্ববাজারে আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন কর্মসৃষ্টির সম্ভাবনাকে সামনে রেখে এ কথা দায়িত্ব নিয়েই বলা যায় যে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্যোক্তা উন্নয়নই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যতের অন্যতম অর্থনৈতিক কৌশল, সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন কৌশলের বিবেচনাতেও যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক : পরিচালক (সিডিসি), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এবং প্রাক্তন পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন, ধঃশযধহ৫৬@মসধরষ.পড়স