আগামী বছরেই বিদেশিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ৬৪ হাজার কোটি রুপি আয়ের টার্গেট ভারতের, সবচেয়ে বেশি রোগী বাংলাদেশের
আসিফুজ্জামান পৃথিল, দুর্জয় চক্রবর্তী : ভারতে এখন সবচেয়ে বেশি পর্যটক যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে। এর মধ্যে অধিকাংশই যায় বাংলাদেশ থেকে। ২০১৭ সালেই ভারতে চিকিৎসা নেওয়া প্রতি হাজার বিদেশী রোগীর ২২০ জনই বাংলাদেশী! এই চিকিৎসা পর্যটনকে আরো উল্মম্ফিত করতে চায় ভারত। দেশটির লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে একে ৯০০ কোটি ডলার বা ৬৪ হাজার কোটি রুপি শিল্পে পরিণত করা। সিএনএন
বাংলাদেশে থেকে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীর পরিমাণ ফি বছর বাড়ছে। ২০১৬ সালে ভারতে চিকিৎসা নেওয়া প্রতি হাজার বিদেশী রোগির মধ্যে ২১০ জন ছিলেন বাংলাদেশি। আর ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১২০ জন। অর্থাৎ ২ বছরে ভারতে চিকিৎসার নিতে চাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এই তালিকায় গত ৩ বছর ধরেই বাংলাদেশের ঠিক পেছনেই রয়েছে আফগানিস্থান। ২০১৭ সালে ভারতে চিকিৎসা নেওয়া প্রতি হাজার বিদেশীর মধ্যে ৫৫ জন ছিলেন আফগান নাগরিক। ২০১৬ সালে সংখ্যাটি ছিলো প্রতি হাজারে ৬০ জন। অর্থাৎ এক বছরে বাংলাদেশি রোগি বাড়লেও কমেছে আফগান রোগি। তবে ২০১৫ সালে সংখ্যাটি ছিলো প্রতি হাজারে মাত্র ২৫ জন।
এই বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চেধৈুরী মনে করেন, বাংলাদেশের আইনগত কিছু জটিলতার কারণে রোগিরা ভারতমুখি হতে বাধ্য হচ্ছেন। এই প্রবীণ চিকিৎসক মনে বলেছেন বাংলাদেশে থেকে ভারতে যাওয়া রোগিদের বড় অংশই অংগ তথা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যান। বাংলাদেশের আইন এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত জটিল। নিকট আত্মীয় ছাড়া কেউ চাইলেও কাউকে কিডনী দান করতে পারেন না। তিনি মনে করেন, মানবিক কারণে হলেও এই আইন শিথিল করা জরুরী। ডা. জাফরুল্লাহর মতে এই সমস্যার আরো একটি কারণ হলো সাধারণ মানুষের থেকে আত্মিকভাবে দূরে থাকা ব্যক্তিদের চিকিৎসা পেশায় আসা। বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধনী পরিবার ও শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাই এই পেশায় আসেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি জেলায় মেডিকেল হলে এই সমস্যা কমবে বলে মনে করেন ডা. জাফরুল্লাহ।
এদিকে কম খরচে ভালো চিকিৎসা, এই শ্লোগানকে পুঁজি করে সরকারিভাবে চিকিৎসা পর্যটনের আওতা বাড়াতে চায় ভারত। আরো বেশি চিকিৎসাসেবাপ্রত্যাশীদের আগমনকে উৎসাহ দিতে ভিসা সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করতে চাইছে দেশটি। লাকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী কে জে আলফনস্ বলেছেন, ‘ভারত কম খরচে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা দিতে সক্ষম। ই-ট্যুরিস্ট ভিসার আওতায় মেডিকেল ভিসা ও মেডিকেল এটেন্ডেন্ট ভিসাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবং এ ভিসায় সর্বোচ্চ ৬ মাস ভারতে অবস্থান করা যাবে।’
২০১৫ সালে স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল ছিল ভারত। সে বছর প্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজার পর্যটক চিকিৎসাজনিত কারণে ভারত ভ্রমণ করে। যা সরকারি উপাত্ত অনুসারে ২০১৭ সালে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫৬ জনে উন্নীত হয়। সম্পাদনা : ইকবাল খান