কার্যক্রম গোছানোর অজুহাতে আরও সাড়ে ৯ মাস বাংলাদেশে থাকতে চায় অ্যাকর্ড নাখোশ পোশাক মালিকরা
স্বপ্না চক্রবর্তী : কার্যক্রম গোছানোর অজুহাতে বাংলাদেশে আরও প্রায় সাড়ে নয় মাস অবস্থান করতে চায় ইউরোপীয় ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড)। এর আগে প্রাথমিকভাবে কোনো ধরণের সময়সীমা উল্লেখ ছাড়াই অসমাপ্ত কাজ শেষের পর কার্যক্রম গোটানোর পরিকল্পনা দিলেও সময়সীমাভিত্তিক পরিকল্পনা চাওয়ায় অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে ২৮১ দিনের এক নতুন ওয়ার্কিং পেপার জমা দেয় জোটটি। কিন্তু দেশের পোশাক শিল্পের উপর বিদেশী কর্তৃত্বের খবরদারি মানতে না পারা মালিকরা এ খবরে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে যত দ্রুত সম্ভব তাদের বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার আহ্বান জানায়।
এ ব্যাপারে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অ্যাকর্ডের যেসব অসমাপ্ত কাজ রয়েছে আমরা মনে করছি তা ১৫০দিনের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব। কিন্তু জোটটি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বাড়াতে মড়িয়া। যেহেতু আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী আদালতের শুনানী রয়েছে তাই এ মুহুর্তে তাদের ব্যাপারে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের পোশাক শিল্পখাত এখন পুরোপুরি স্বনির্ভর। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর এই খাতে আর বড় কোনো দুর্ঘটনা তো দূরের কথা ছোটখাটোও কোনো অঘটন ঘটেনি। উপরন্তু আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রীণ ফ্যাক্টরির মালিক হতে পেরেছি। নতুন নতুন বাজারে আমাদেরর পণ্যে রপ্তানী বাড়ছে। এ অবস্থায় আমাদের পোশাক শিল্পে বিদেশী কারো খবরদারির কোনো প্রয়োজন নেই।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্থান পরিকল্পনা দিয়েছিল অ্যাকর্ড। এতে বাংলাদেশে অসমাপ্ত কার্যক্রম ছয় ধাপে শেষ করার কথা উল্লেখ করা হলেও পরবর্তীতে অ্যাকর্ডের প্রস্থান পরিকল্পনা নিয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে সরকার। এতে সদস্য হিসেবে থাকে সরকার, বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ডের। ওয়ার্কিং গ্রুটি এখন পর্যন্ত দুইবার সভা করেছে। এ সময়ের মধ্যে অ্যাকর্ডের পক্ষে ছয় ধাপে ১হাজার ৫৬২ কারখানা পরিদর্শণের কাজ শেষ করা সম্ভব বলে মনে করছে বিজিএমইএ।
ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভায় অ্যাকর্ডের উপস্থাপিত প্রস্থান পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ১৩টি সুপারিশ দেয়া হয়। এর মধ্যে শুরুতেই সময়সীমা উল্লেখ করে নতুন পরিকল্পনা জমা দেয়ার কথা বলা হয়। এ ধারাবাহিকতায় ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় সভায় অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে সময়সীমা উল্লেখ করে ওয়ার্কিং পেপার জমা দেয়া হয়েছে। সেখানে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নে ২৮১ দিনের সময় প্রস্তাব করেছে অ্যাকর্ড। এ ব্যাপারে পোশাক মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএ এর সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, আমাদের পোশাক শিল্প যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেকোনো ধরণের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত আছি। তাই অ্যাকর্ডের মতো কোনো বিদেশী ক্রেতাজোটের আমাদের ওপর খবরদারির আর কোনো প্রয়োজন আছে বলি আমি মনে করি না।
প্রসঙ্গত, অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের পূর্বঘোষিত মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের জুনে। কিন্তু কারখানা সংস্কারে অনগ্রসরতা, শ্লথতা এবং শ্রম অধিকার, নিরাপত্তা না থাকার কারণ দেখিয়েই মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ঘোষণা করে অ্যাকর্ড। এ মূল্যায়ন কার্যক্রম ও সংস্কারের বিষয় নিয়ে বিক্ষুব্ধ কারখানা কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। এ বিষয়ে আদালতের রায় বর্তমানে এক মাসের জন্য মুলতবি রয়েছে। তবে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়ানো বা না বাড়ানো যেহেতু আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল সেহেতু ১৮তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের তদারকিতে অ্যাকর্ডের আর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই তাই আমরা আশা করছি আদালত বিষয়টি নজরে রেখেই সিদ্ধান্ত দেবেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান