ক্ষুধা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বিশুদ্ধপানি সূচকে এগিয়ে বাংলাদেশ
কালাম আঝাদ : সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) বাস্তবায়নে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য হার দূরীকরণ এবং বিশুদ্ধপানিসহ আরও কিছু সূচকে ভালো করেছে বাংলাদেশ। ‘এসডিজি বাংলাদেশ প্রোগ্রেস রিপোর্ট ২০১৮’ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অধিকাংশক্ষেত্রে ২০১৪-১৫ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে ও ২০২০ সালকে লক্ষ্য ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
অন্যান্য সূচকের মধ্যে শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো, অসমতা দূরীকরণ,সুবিচার ও প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করেছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সদস্য ( জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে আপার প্রোভার্টি লাইন (ইউপিএল) ধরা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দারিদ্র্য দূরীকরণে ২০২০ সালে ইউপিএলে বাংলাদেশ ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং এলপিএলে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হার অর্জন করতে চায়।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ক্ষেত্রে এসডিজিতে ভিত্তি হিসেবে রয়েছে স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, শিক্ষায় ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০২০ সালে লক্ষ্য হিসেবে স্বাস্থ্য,শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বাংলাদেশ অর্জন করতে চায় যথাক্রমে ৫, ১৫ ও ১৫ শতাংশ হার।
ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ভিত্তি হিসেবে কৃষিক্ষেত্রে অবদান ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালে এটি অর্জিত হয়েছে ২২৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরের বছরের এ অর্জনের হার ২১০ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কৃষিক্ষেত্রে অবদান কমেছে। ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ২০২০ সালে আমাদের লক্ষ্য কৃষিক্ষেত্রে ৩শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান।
গুড হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিয়িং হিসেবে প্রায় সবগুলো সূচকে মোটামুটি ভালো করেছে বাংলাদেশ।
মানসম্মত শিক্ষায় প্রথাগত শিক্ষার প্রয়োগ হিসেবে ২০১৪-১৫ ভিত্তিবছরে মোট ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের প্রথাগত শিক্ষার প্রয়োগ ঘটাতে পেরেছেন। ২০২০ সাল নাগাদ প্রথাগত শিক্ষায় বাংলাদেশ অর্জন করতে চায় মোট ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ সে সময় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের প্রথাগত শিক্ষার প্রয়োগ ঘটাতে পারবে। ওই বছর ছেলে ও মেয়েদের ৮০ শতাংশ হারে প্রথাগত শিক্ষার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেছে।
লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০ থেকে ২৪ বছরের নারীদের সঙ্গে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের তুলনা করলে ১৫ বছরের আগে (২০১২-১৩ অর্থবছরে) ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ১৮ বছরের আগে (২০১৪ সালে) ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২০ সাল নাগাদ এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে ১৫ বছরের আগে ১৫ শতাংশ এবং ১৮ বছরের আগে ৩০ শতাংশ হার অর্জন করে বাল্যবিবাহ রোধ করতে চায়।
বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে ভিত্তি হিসেবে ৮৭ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে। ২০১৭ সালেও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা মানুষের হার ৮৭ শতাংশ। ২০২০ সাল নাগাদ শতভাগ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ।
২০২০ সালে ৯৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় আসবে। ২০১৭ সালে এ হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ ও ২০১৮ সালে ৯০ শতাংশ।
রিনিউয়েবল এনার্জির ক্ষেত্রে ২০২০ সালে অর্জন হবে ১০ শতাংশ। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এ হার ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৮৫ ও ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এসব সূচকের সঙ্গে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে নারী ও পুরুষ চাকুরিজীবীদের (প্রতিবন্ধীসহ) গড় মাসিক আয় (২০১৫-১৬ অর্থবছর ধরে) ১২ হাজার ৮৯৭ টাকা। এরমধ্যে পুরুষের ১৩ হাজার ১২৭ টাকা ও নারী চাকুরিজীবীর মাসিক গড় আয় ১২ হাজার ৭২ টাকা। ২০২০ সালে এর সকল ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ।
২০১৫-১৬ ভিত্তিবছরে দেশে বেকারের (প্রতিবন্ধীসহ) গড় হার ছিল ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে পুরুষ বেকারের হার ছিল ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ও নারী বেকারের হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২০ সালে বাংলাদেশের বেকারের হার দূর করতে লক্ষ্য হচ্ছেÑগড় বেকারের হার ৪ শতাংশে ধরে রাখা। এ সময়ে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাকুরির বাজার ও অন্যান্য কর্মসংস্থান এক্ষেত্রে বিবেচিত হয়েছে।
১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুবকরা চাকুরি, কর্মসংস্থান বা ট্রেনিংয়ে নেইÑএমন ক্ষেত্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর গড় অনুপাত ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সে বছর পুরুষের হার ছিল ৯ দশমিক ৯ শতাংশ ও নারীর হার ছিল ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ। লক্ষ্য অর্জনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গড় হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে পুরুষ ও নারীর হার যথাক্রমে ১০ দশমিক ৩ ও ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২০ সালে এক্ষেত্রে লক্ষ্য ২২ শতাংশ গড়হার। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান