কাশ্মীরে হামলার জন্যে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে বাণিজ্যে সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশের তালিকা থেকে ইসলামাবাদকে বাদ দিলো ভারত
সান্দ্রা নন্দিনী : জম্মু ও কাশ্মীরে বড় ধরণের আত্মঘাতী হামলা চালানো হতে পারে, এরকম হুঁশিয়ারি আগেই পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ দিয়েছিলো বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার পুলওয়ামা জেলার অবন্তীপুরাতে সিআরপিএফ’র কনভয়ে বোমা হামলায় অন্তত ৪৪ সেনাসদস্য ও বহু আহতের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ১৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামলার পর পরই এর দায় স্বীকার করে জইশ-ই-মহম্মদ। এনডিটিভি, বিবিসি, রয়টার্স, ইয়ন
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ৭০টিরও বেশি গাড়িতে আড়াই হাজার সিআরপিএফ জওয়ান জম্মু-কাশ্মীর হাইওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় ৩৫০ কেজি ওজনের বিস্ফোরক বোঝাই একটি মাহিন্দ্র স্কর্পিও গাড়ি ওই কনভয়ের একটি বাসে আঘাত হেনে বিস্ফোরিত হয়।
সূত্রমতে, হামলার দুইদিন আগেই পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ জানিয়েছিল যে, কাশ্মীরে খুব ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা হতে চলেছে। এমনকি কীভাবে আক্রমণ করা হবে, তাও অনলাইনে আপলোড করা ভিডিও’র মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠনটি। ভিডিওতে আফগানিস্তানের একটি জায়গাকে দেখানো হয়েছিল। যেখানে এই একইরকমভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল গাড়ি ভর্তি বিস্ফোরক। সূত্রের খবর অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ ওই ভিডিওসহ সম্ভাব্য জঙ্গিহামলার খুঁটিনাটি কী কী হতে পারে তা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগকে জানালেও, তারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
এদিকে, হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন দেশটির সকল রাজনৈতিক দলের নেতা। হামলায় নিবেদিতপ্রাণ সেনাদের আত্মত্যাগে গভীরশোক প্রকাশ করে পূর্বনির্ধারিত মধ্যপ্রদেশ সমাবেশ বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি, নিরাপত্তা বিষয়ে মন্ত্রিসভায় একটি জরুরি বৈঠকেও বসেন তিনি।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, ‘অত্যন্ত কাপুরুষের মতো কাজ এটা। এতজন সেনার শহীদ হয়ে যাওয়া মেনে যাওয়া না। আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আহতদেরও দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’ সেনাবাহিনীর ওপর হওয়া ভারতীয় ইতিহাসের ভয়াবহতম হামলায় নিহত সেনাদের পরিবারারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘পরিবারের কাউকে হারানোর কষ্টটা আমি অনুভব করতে পারি।’ কেন্দ্রীয়মন্ত্রী অরুণ জেটলি টুইট করে বলেন, ‘এই কাজে জড়িতদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা কোনওদিন ভুলতে পারবে না।’
অন্যদিকে, পুলওয়ামা হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। সেনাসদস্যদের ওপর হামলার ঘটনাকে একটি ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বিষয় হিসেবে এক বিবৃতিতে আখ্যা দেয় পাকিস্তান সরকার। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশ্বের যেকোনও জায়গায় হওয়া সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায় পাকিস্তান। তাই কোনরকম তদন্ত ছাড়াই ভারতীয় সরকার ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এ হামলার জন্য ক্রমাগতভাবে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার বিষয়টি তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
হামলার পর পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ প্রধানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছে ভারত। একইসঙ্গে ভারত সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেশের(‘দ্য মোস্ট ফেভারড নেশন’-এমএফএন) তালিকা থেকে পাকিস্তানের নাম প্রত্যাহার করেছে। ১৯৯৪ সালে উচ্চ আমদানি ও নি¤œকরের এই কোটায় পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করে ভারত। শুক্রবার ভারতের মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলওয়ামা হামলায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ একঘরে করতে প্রয়োজনীয় সবরকম পদক্ষেপ নেবে ভারত। এছাড়া, বাণিজ্যখাতে চলমান যাবতীয় সুবিধাও বন্ধ করা হবে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানকে যতশীঘ্র সম্ভব তাদের মাটিতে পরিচালিত সকল জঙ্গি সংগঠনের প্রতি সমর্থন বন্ধ করতে হবে। হোয়াইট হাউজ জানায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্য রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী ও তাদের স্বর্গসৃষ্টিকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানায়।’ উল্লেখ্য, মার্কিন সিনেটের ১১ সদস্য এবং ১৫ জন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস সদস্য পুলওয়ামা হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান